ভার্সাই সন্ধির সমালোচনা।
ভার্সাই সন্ধিটির সমালোচনা উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : দীর্ঘ চার বছর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলার পর ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে জার্মানি বিনাশর্তে মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বে পুনরায় শান্তি- শৃঙ্খলা স্থাপন, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ১৯১৯ সালে মিত্র শক্তির প্রতিনিধিগণ ফ্রান্সের ভার্সাই শহরে এক সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিই ঐতিহাসিক ভার্সাই চুক্তি নামে পরিচিত। জার্মানিকে দোষী সাব্যস্ত করে আষ্টেপৃষ্ঠে শৃঙ্খলিত করার উদ্দেশ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ভার্সাই সন্ধির সমালোচনা
ভার্সাই সন্ধি চুক্তিকে তার একতরফা শর্তাবলির জন্য ব্যাপকভাবে সমালােনা হয়েছে। নিম্নে ভার্সাই চুক্তির বিভিন্ন সমালােচনাসমূহ আলােচনা করা হলাো :
মিত্রশক্তির প্রতি অসন্তোষ ও ঘৃণার উদ্রেক
ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির প্রতি অবিচার করা হয়েছিল সন্দেহ নেই। এতে জার্মানির প্রতি শক্তিবর্গের তীব্র অসন্তোষ ও ঘৃণার সুস্পষ্ট আভাস বিদ্যমান। শক্র প্রতি এরূপ বিরূপ মনোভাব নিয়ে সন্ধিপত্র রচনা করতে গিয়ে নেতৃবর্গ রাজনৈতিক ও নৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
স্বাক্ষরদানে বাধ্য করা
ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জার্মান প্রতিনিধিগণের স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছিল । জার্মান প্রতিনিধিগণকে অপরাধীর ন্যায় প্রহরাধীনে 'শান্তি সম্মেলন কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সে অবস্থায় অধিবেশন থেকে বের করে আনা হয়। এরূপ অপমানজনক ব্যবহার করে অযথা জার্মান জাতির প্রতি ঘৃণা ও অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছিল।
জার্মান অর্থনীতি পঙ্গু করার উদ্দেশ্য
ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক ও ঔপনিবেশিক শর্তগুলাে ছিল অবিবেচনাপ্রসূত এবং অন্যায়ভাবে জার্মান অর্থনীতিকে পঙ্গু করার হীন চক্রান্ত । এর দ্বারা জার্মানির শিল্পপ্রধান ও খনি প্রধান অঞ্চলগুলাে আত্মসাৎ করা হয়।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
জার্মানিকে যেসব প্রতিশ্রুতি ইউরোপীয় শক্তিবর্গ দিয়েছিল তার কোনোটাই প্রতিপালিত হয় নি উইলসনের চৌদ্ধ দফা নীতির অবলম্বনে সন্ধিপত্র রচিত হয় নি। ভার্সাই সন্ধির বিরুদ্ধে এটিই ছিল জার্মানির প্রধান অভিযোগ।
উপসংহার : নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা, পরিস্থিতি এবং এ চুক্তির শর্তাবলি পর্যালােচনা করলে দেখা যায় এটি কোনােভাবেই সমর্থনযােগ্য ছিল না। এতে জার্মানির উপর যে জবরদস্তিমূলক শর্ত আরােপ করা হয়েছিল তার জন্য এটিকে শান্তিচুক্তি না বলে একটি বিরাট অপহরণ চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।কারণ ভার্সাই চুক্তি যে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করেছিল এটি সন্দেহাতীতভাবে সত্য।এর ফলে ইতিহাসের ভয়াবহতম যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ সালে সংঘটিত হয়।