ইসলামের ইতিহাস : প্রাচীন আরব জাতি।
প্রাচীন আরব জাতির পরিচয়।
আরব জাতিঃ আরব উপদ্বীপের আদিম অধিবাসীদের সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য নিরূপণ করা এখনও সম্ভব হয় নি। তবে স্বকীয়তা এবং স্বাতন্ত্র্যবোধে উদ্দীপ্ত আরব জাতি প্রধানত দু'ভাগে বিভক্ত: যথা বায়দা (البيداء) ও বাকিয়া ( أناقة)। কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রখ্যাত প্রাচীন বংশ 'আদ', 'সামুদ', 'তামস' ও 'জাদীস' প্রভৃতি প্রাচীন আরব গোত্রগুলো প্রথম শ্রেণিভুক্ত ছিল। পরবর্তী জাতিগুলোর মধ্যে অভ্যুত্থানে প্রাচীন বায়দা গোত্রগুলো বিলুপ্ত হয়।
অধুনালুপ্ত বায়দা গোত্রের উত্তরাধিকারী বাকিয়া জাতি বর্তমান আরব ভূখণ্ডের প্রধান অধিবাসী। এ বাকিয়া শ্রেণিভুক্ত আরবদের দু'ভাগে বিভক্ত করা যায়। "প্রকৃত আরব বা আরিবা" ও 'আরবিকৃত আরব বা' মুশতারিবা । সর্বাপেক্ষা আদিম ও নিষ্কলুষ রক্তের অধিকারী আরিবা গোত্র কাহতানের বংশোদ্ভূত। দক্ষিণ আরবের ইয়ামেন অঞ্চলের অধিবাসী ছিল বলে তাঁরা ইয়ামেনীয় বা হিমারিয়া বলে পরিচিত ছিল। কাহতানের বংশের অভ্যুত্থান হতেই আরব জাতির প্রকৃত ইতিহাসের সূত্রপাত হয়। উল্লেখ্য যে, রক্তের পবিত্রতার জন্য আরিবা অথবা ইয়ামনীয়রা মুস্তারিবা গোত্রের তুলনায় অধিক ক্ষমতাশালী ছিল এবং মদিনায় হিজরত করার পর প্রকৃতপক্ষে রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁদের নিকট হতে সহযোগিতা লাভ করেন। ইসমাইল (আ.)-এর একজন বংশধর আদনান মুস্তারিবা গোত্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। হিজাজ, নজদ, পেত্রা, পালমিরা অঞ্চলে বসবাসকারী মুস্তারিবা গোত্রের নিযারী হতে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর কুরাইশ বংশের উদ্ভব হয়। মুস্তারিবাগণ উত্তর আরবের হিজাজের অধিবাসী হিসেবে হিজাজি বা মুদারি নামেই সমধিক পরিচিত লাভ করেন।
উত্তর আরবগোত্র সাধারণভাবে নিযারি অথবা মুদারি নামে অভিহিত এবং সাধারণত তারা যাযাবরের জীবন যাপন করত। অপরদিকে দক্ষিণ আরব অথবা ইয়ামেনিরা ছিল নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত। কারণ, তারা সাবিয়ি ও হিমায়ারি রাজ্যের অধিবাসী ছিল। উত্তর আরবের লোকেরা কুরআন শরীফের ভাষা অর্থাৎ আরবিতে কথা বলত। দক্ষিণ আরবের লোকেরা প্রাচীন সেমেটিক ভাষা, সাবেয়ি ও হিমায়ারি ব্যবহার করত। কৃষ্টির দিক হতে বিচার করলে দক্ষিণ আরবের সভ্যতার উন্মেষ হয় খ্রিস্টের জন্মের ১২শত বছর পূর্বে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের আবির্ভাবের অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত উত্তর আরব ইতিহাসে কোনো বলিষ্ঠ অধ্যায়ের সূচনা করতে পারেনি।