দ্রুত মোটা হওয়ার উপায়।

মোটা হবো কিভাবে - চিকন হওয়ার বিডম্বনা এড়াতে স্বাস্থ্যবান হতে চাইলে কি করবেন?

আমি কিভাবে মোটা হবো সম্প্রতি গুগলে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন অনেক। কারণ যাই হোক না কেন আমাদের সমাজে বেশি মোটা বা ওজন একটু কম হলে নানান কটুক্তির স্বীকার হন অনেকে।

সাধারণত ওজন কম বা চিকন হলে যেসব কটুক্তির স্বীকার হন তা হলো…

  • ফুঁ দিলে উড়ে যাবে
  • বাড়িতে খেতে দেয় না
  • সোমালিয়ায় বাড়ি নাকি
  • শুঁটকি
  • অপুষ্টিতে ভুগছে
  • দুর্ভিক্ষ

এমন নানান রকম তির্যক মন্তব্য আর ঠাট্টা মশকরায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায় অনেকের। তাই কিভাবে একটু ওজন বাড়বে তাই নিয়েও উন্মুক থাকেন কেউ কেউ। কিন্তু কেউ যদি তার কম ওজন নিয়ে চিন্তিত হন এবং ভাবেন যে তার একটু মোটা হওয়া দরকার তাহলে তিনি কি করবেন? এই নিয়ে ডাইটেশিয়ান আর পুষ্টিবিদরা কি বলছেন তাই নিয়ে আলোচনা করবো আজকের পোস্টে।

নিজের আদর্শ ওজন সম্পর্কে জানুন

পুষ্টিবিদরা বলছেন যে, সবার আগে নিজের উচ্চতা অনুযায়ী নিজের আদর্শ ওজন কত সেটি জানা জরুরী। এটি জানতে হলে বডি বা সিনটেস বিএমআই যা শরীরের আদর্শ ওজন নির্ণয়ের একটি গাণিতিক পদ্ধতি সেটি সম্পর্কে জানতে হবে। এর একটি সহজ পদ্ধতি আছে।

যেমন আপনার উচ্চতা যত সেন্টিমিটার,তা থেকে ১০০ বিয়োগ করলে আপনি পাবেন কিলোগ্রামে আপনার কাম্য ওজন।

যেযন ধরুন, আপনার উচ্চতা যদি ১৬২ সেন্টিমিটার হয়, তাহলে কাম্য ওজন হবে ৬২ কেজি। ১৬২ থেকে ১০০ বাদ দিলে যে সংখ্যা টি আসবে সেটাই হবে কেজিতে আপনার কাম্য ওজন। এবার এই ওজন থেকে মেয়েদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ছেলেদের জন্য ১০ শতাংশ বাদ দিলেই পাবেন আপনার আদর্শ ওজন।

সুষম খাদ্য

মোটা হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রুপের খাদ্য অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাদ্য বেশি খান অনেকে। কিন্তু এতে শরীরের ক্ষতি হয় আরো। বরং সব খাদ্য উপাদান রয়েছে এমন খাদ্য খেতে হবে। এক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন, চর্বি, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ ফলমূল রাখুন খাদ্য তালিকায় । সাথে প্রচুর পানি পান করতে হবে।

সাধারণ নিয়ম হচ্ছে একজন মানুষের উচ্চতার অর্ধেক লিটারে পরিমাপ করে পানি পান করতে হবে।

ব্যায়াম করুন

অনেকে ভাবেন যে ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করবে।কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলেন যে, ওজন কমাতে যেমন ব্যায়াম করতে হয় ঠিক তেমনি ওজন বাড়াতেও ব্যায়াম করা দরকার। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করলে ক্ষুধা বাড়বে, হজম প্রক্রিয়া ভালো হবে এবং ঘুমও ভালো হবে। এই জন্য জিমে যেতে পারেন, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন কিংবা ইউগা, সাইকেলিং কিংবা সাঁতার কাটতে পারেন। শারীরিক কসরতের সাথে মানসিক প্রশান্তির জন্য ইউঘা করতে পারেন।

সময়মত খাবার খান

খাবারের সময় ঠিক রাখুন অর্থাৎ সকালের নাস্তা সময়ের অভাবে খেতে পারলেন না, দুপুরে খেতে ইচ্ছে করলো না কিংবা রাতে একেক দিন একেক সময় খাবার খাচ্ছেন এই সব সুস্থ শরীরের জন্য একেবারেই অনুচিত। ফলে ওজন কমাতে চাইলে বা বাড়াতে চাইলে এই নিয়ম সবার জন্য এক আর তা হলো সময়মতো খেতে হবে। কোনো বড় অসুবিধা না থাকলে প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা।

পর্যাপ্ত ঘুমান

শরীরকে যথাযত কাজ করানোর অবস্থায় সুস্থ রাখার জন্য ঘুম খুবই প্রয়োজন। ওজন বাড়ানোর জন্য একথা সত্য। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত বলে জানান পুষ্টিবিদরা। ঘুম এর থেকে কম হওয়া যাবে না। কারণ প্রর্যাপ্ত ঘুম এর থেকে কম হলে শরীরে যাওয়া খাবার ঠিকমতো হজম হবেনা এবং শরীরে পুষ্টির যোগান ঠিক মতো হবে না। সেজন্য সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস করা যেতে পারে।

যেসব ভুল করবেন না

মোটা হওয়ার জন্য কোনো ওষুধের সাহায্য নেওয়ার দরকার নেই বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। কোনো ভিটামিন বা অন্য কোনো খাদ্য উপাদানের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করতে হবে। অনেকে পিৎজা , বার্গার বা কেক এই ধরণের নানান খাবার ওজন বাড়ানোর জন্য কার্যকর মনে করে খেয়ে থাকেন। সাথে অনেকে ভাজাপোড়াও খান। কিন্তু এই সব শরীরের ক্ষতি করে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। জাঙ্কফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মোটা হওয়ার জন্য অনেকে স্ট্ররয়েড জাতীয় ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গ্রহণ করে থাকেন। এর ফলে শরীরে নানান রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। যা নিয়ে সারা জীবনের জন্য ভুগান্তিতে পড়তে পারেন। শুকনা বলে লোকে ঠাট্টা করলেও মনে রাখবেন যে সুস্থতা জরুরি। সে জন্য ওজন কম বলে হীনমন্যতায় না ভুগার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। কারো কারো জীনগত কারণে ওজন কম থাকে।হয়তো চেষ্টা করেও মোটা হতে পারেন না অনেকে। ফলে ভালো দিকটি মাথায় রেখে সন্তুষ্ট থাকুন।

Next Post Previous Post