Globalisation বা বিশ্বায়ন কি

Globalisation বা বিশ্বায়ন কি?


Globalisation বা বিশ্বায়ন হলাে পারস্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযাগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় এবং মিথস্ক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি সবকিছুর ওপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। এই পদ্ধতির চালিকা শক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়ােগ, আর এর প্রধান সহায়ক শক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি । ব্যক্তি জীবনের উৎকর্ষ সাধন, জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতি, বিশ্বের জাতিসমূহের পারস্পরিক সহযােগিতা এক অভিন্ন পরিবারের সােনালী স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে তত্ত্ব ও যােগাযােগ প্রযুক্তি। প্রযুক্তি নির্ভর টেলিকমিউনিকেশন, পদার্থ, গণিত, পরিসংখ্যান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান প্রভৃতির

সমন্বিত জ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ এই পোস্টের আলােচ্য বিষয়বস্তু।



বিশ্বগ্রামের ধারণা Concept of global village



আধুনিক যোগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতিতে এবং দ্রুত যোগাযােগের সুবিধার ফলে পৃথিবী ছােট হয়ে আসছে। আমরা এখন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর কোথায় কী ঘটছে তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারি। পৃথিবীর দেশগুলােকে যেন গ্রামের পরিবারের সমন্বয় বলে মনে হয়। এমনকি তারা তাদের সুখ-দুখ পাশাপাশি প্রতিবেশীর মতো বিনিময় করছে। যদি কোনাে দেশ সমস্যায় পড়ে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো তার সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে আসছে।

আমরা আমাদের অনুভূতিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে পৌছাতে পারছি। পৃথিবীব্যাপী স্বল্প সময়ে এই যােগাযােগ সুবিধার ফলেই বিশ্বকে একটি গ্রাম হিসেবে তুলনা করা হচ্ছে। এজন্য বর্তমান বিশ্ববকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম বলা হয়।


Globalisation বা বিশ্বায়নের সংঙ্ঘা


বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী এবং দার্শনিক বিশ্বগ্রাম সম্পর্কে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েক জনের সংজ্ঞা দেওয়া হলো-


হারবার্ট মার্শাল মাকলুহান তার "The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man' ও "Understanding Media' বইতে প্রথম বিশ্ব গ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ এর ধারণা দেন।


রােলান্ড রবার্টসন বলেন, "বিশ্বায়ন হচ্ছে বিশ্বের সংকোচন এবং পরস্পর নির্ভরশীলতা।"


মার্টিন আলব্রো বলেন, "বিশ্বায়ন হচ্ছে সামগ্রিক কমিউনিটির মধ্যে সমস্ত মানুষকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া।"


এন্থনি গিডেন্স বলেন, "বিশ্বায়ন হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সামাজিক সম্পরর্কের প্রগাঢ়করণ।"


সুতরাং আমরা বলতে পারি, বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যেখানে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করে এবং ইলকট্রনিক মিডিয়া ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা সহজেই তাদের চিন্তা-চেতনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি-কৃষ্টি ইত্যাদি বিনিময় করতে পারে ও একে অপরকে সেবা প্রদান করে থাকে।


WWW আবিষ্কারের অনেক পূর্বেই Global Vilage শব্দের ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্বের যেকোন প্রান্তে এখন পাশাপাশি বসে যোগাযােগ হচ্ছে বলে মনে হয়। skype, Facebook, Myspace এবং Twitter এ কথা বলে মানুষ

সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-গবেষণার সুযােগ সৃষ্টি করে। মূলত ইলেকট্রনিক টেকনােলজির মাধ্যমে ICT বিশ্বগ্রাম তৈরিতে ক্রমবর্ধমান উন্নতি সাধন করেছে। এক কথায় বলা যায় "গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন বা কম্যুনিটি, যেখানে কম্যুনিটির সকল সদস্য ইন্টারনেট তথা যােগাযােগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত"। তথ্য ও যােগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির ফলে বসবাসযোগ্য পৃথিবী ক্রমশ ছােট হয়ে আসছে, যেন একটি গ্রামে পরিণত হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশেই গ্রামের সকল মানুষের মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক ও সহযােগিতা বিদ্যমান থাকে। তথ্য প্রযুক্তি উন্নতির কারণে এবং ইন্টারনেটের যথোপযুক্ত ব্যবহারের ফলে বিশ্ব আজ গ্রামের মতাে ছােট হয়ে আসছে। অক্সফোর্ড আমেরিকান ডিকশনারি অনুযায়ী গ্লোবাল ভিলেজ হচ্ছ- "The world

Considered a single community linked by telecommunications." উইকিপিডিয়ার একটি উদ্ধৃতি অনুযায়ী Global Village হচ্ছে "The global village is the sociological and cultural structure".



বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদান সমূহ Elements of establishing Global village)


১. হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি,

২. প্রােগ্রামসমূহ বা সফটওয়্যার,

৩. ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা,

৪. ডেটা বা ইনফরমেশন,

৫. ইন্টারনেট সংযুক্ততা (Internet Commectiviy)


১. হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটার সংশিষ্ট যন্ত্রপাতি (Hardware): হার্ডওয়্যার বলতে কম্পিউটারের সমস্ত ফিজিক্যাল ইলেকট্রোনিক কম্পোনেন্টকে বােঝায়। যেমন- বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন প্রিন্টেড সার্কিট বাের্ড, ডিসপ্লে এবং প্রিন্টার ইত্যাদি। বিশ্বগ্রামে যেকোন ধরনের যােগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কম্পিউটারের সাথে মােবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন, অডিও ,ভিডিও রেকর্ডার, ওয়েব ক্যাম, স্যাটেলাইট, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি হার্ডওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত।



২. প্রোগ্রামসমূহ বা সফটওয়্যার (Sofitware): কম্পিউটারকে কার্যোপযোগী করার জন্য এবং কম্পিউটার দ্বারা কোন সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রামসমূহকে সফটওয়্যার বলে । বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার প্রয়ােজন। সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফটওয়্যার, কমিউনিকোটিং সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং ভাষা ইত্যাদি।


৩. ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা (Human capacity): বিশ্বগ্রামের উপাদানের মধ্যে ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা অন্যতম। ICT নির্ভর বিশ্বগ্রাম তৈরির জন্য মানুষের সক্ষমতা অত্যাবশ্যক। ডেটা বা ইনফরমেশন (Data or information): ডেটা বা উপাত্ত হলো তথ্যের উপাদান। ডেটা হচ্ছে তথ্যের মৌলিক ধারণা যা সাজালে বা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তথ্য বা ইনফরমেশন তৈরি হয়। এটি অঙ্ক, বর্ণনা, টেক্সট, ইমেজ, অডিও ভিডিও এমনকি গ্রাফও হতে পারে। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় ডেটা প্রসেসিং করে মানুষের কল্যাণে তথ্যে পরিণত করা হয়। বিশ্বগ্রাম সৃষ্টিতে ডেটা আদান প্রদান অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


৫. ইন্টারনেট সংযুক্ততা (Internet Conmectivity): ইন্টারনেট সংযুক্ততা ছাড়া বিশ্বগ্রাম প্রায় অসম্ভব। সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টিতে গঠিত ইন্টারনেট বিশ্বগ্রামের ধারণাকে আজ বাস্তবে পরিনত করেছে।



বিশ্বগ্রাম সৃষ্টির কারণ:


বিশ্বগ্রাম প্রক্রিয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে তথ্য ও যোগাযােগ প্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশ। বিশ্বকে যুক্ত করার প্রথম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম দিকে সারা দুনিয়া জুড়ে টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটারের উদ্ভাবন ঘটে এবং ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের উদ্দ্যোগে ARPANET নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে শুরু হয় ইন্টারনেটের। ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ এখন বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। বিশ্বগ্রামের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে বিশ্বের কেন্দ্রের এবং কেন্দ্রের বাইরে কোনাে কোনো অঞ্চলে বিশাল বহুজাতিক সংস্থা গড়ে ওঠা। বহুজাতিক সংস্থা তাদের প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক কৌশল এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রসার ঘটায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুন্বের পর মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাগুলো ইউরােপে উৎপাদন শুরু করে। ১৯৭০ সালের পর ইউরোপীয় সংস্থাগুলাে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন শুরু করে। একই সময়ে জাপানী সংস্থাগুলাে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন শুরু করে। এভাবে বহুজতিক সংস্থা অর্থনৈতিক একীভবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বগ্রামের ফলে সমাজে ভালো ও খারাপ উভয় ধরনের প্রভাবই পরিলক্ষিত হচ্ছে। 


নিচে এদের বর্ণনা দেওয়া হলো;


বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য; 


বিশ্বায়নের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়-


১. ভৌগলিক আবস্থানের উর্ধ্বে সামাজিক নতুন বিন্যাস যার মাধ্যমে দূরের মানুষের সাথে তাৎক্ষনিক যােগাযোগ এবং সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। এই সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে ক্ষমতার নতুন বিন্যাসও তৈরি হচ্ছে।


২. বিশ্বব্যাপী সামাজিক সম্পর্কের এবং বিনিময়ের ব্যাপ্তি, গভীরতা, গতি এবং প্রভাব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।


৩. নতুন নেটওয়ার্ক এবং যোগাযোগের 'গ্রন্থি' সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সমাজবিজ্ঞানী একে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা

বলে অভিহিত করেছেন। যদিও পশ্চিমা দেশসমূহে এর উৎপত্তি, তথাপি এটি ক্রমশ যোগাযােগ নেটওয়ার্কের

মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।


৪. বিশ্বায়ন কোন একমুখী প্রক্রিয় নয়। দুটি বিপরীত বা অনেকের মতে, দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া এর সাথে জড়িত। এর

প্রথমটি হচ্ছ বিশ্বমুখীনতা বা 'Global' যার মাধ্যমে বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠান এবং সংস্কৃতি সমরূপ ধারণ করে। অন্যটি হচ্ছে স্থানিকতা বা Local' যার মাধ্যমে প্রান্তিক সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্কৃতি গুরুত্ব অর্জন করে এবং শক্তিশালী হয়। এর উদাহরণ হচ্ছে- বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলির প্রতি এখন নতুন করে দৃষ্টিপাত করা হচ্ছে এবং সেগুলোকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।



বিশ্বায়নের মাধ্যমসমূহ: 


বিশ্বায়ন কোন সংকীর্ণ ধারণা নয়, এটি একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। এর বহিঃপ্রকাশও বিভিন্নমুখী। বিশ্বায়নের বিকাশে তাই বিভিন্ন ধরনের শক্তির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ স্পষ্ট। বহুজাতিক সংস্থার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রভৃতি। এ সব সংস্থা বিশ্ব অর্থনীতির সম্প্রসারণে পালন করছে ব্যাপক ভূমিকা। তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশ, বিশ্ব যাতায়াত ও যােগাযােগ ব্যবস্থার পরিবর্তনই বিশ্বের সভ্যতা ও জনসমাজে পারস্পরিক নৈকট্য সুদূঢ় করেছে। আর এসবের ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া হয়েছে ত্বরান্বিত।



বিশ্বায়নের ইতিবাচক সম্ভাবনা:


বিশ্বায়ন মানবজাতির প্রয়োজনেই উদ্ভুত এক ব্যাপকভিত্তিক প্রত্যয়। কালের বিবর্তনে মানুষের রুচি মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, মানুষের চাহিদা ও ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুলভাবে। আর এ চাহিদা পূরণ কোন এক ক্ষুদ্র জনসমাজের পক্ষে সম্তব নয়। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলােয় যেখানে সম্পদের

তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি তাদেরকে বাধ্য হয়েই বিশ্বায়নে অঙ্গীভূত হতে হচ্ছে। তা ছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত কলাকৌশল ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে এসব দেশও তাদের সহযোগী ভাবতে পারছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্র পর থেকে আন্তর্জাতিক পরিবহন ও যােগাযােগ ব্যয় ,হ্রাস, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বৈশ্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পুঁজির প্রবাহ ব্যাপক হয়েছে। তাই এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় উনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দী এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর জন্য বিশ্বায়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এর প্রমাণ, গত চার দশকে এশিয় দেশগুলো বিশ্ব বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।


সংক্ষেপে বিশ্বায়নের ইতিবাচক সম্ভাবনা সমূহ হলাে-


১. যেকোনাে স্থানের সাথে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর যােগাযাগ সম্ভব হয় ।

২. কম খরচে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের লোকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব।

৩. মনুষ্য শক্তির অপচয় রােধ, কাজের দক্ষতা ও গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে এবং লেনদেন সহজতর হচ্ছে।

৫. শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষাগ্রহণ ও প্রদান সহজতর হয়েছে এবং বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল সহজে জানা যাচ্ছে।

৬. মানুষের স্বাস্থ্য ও উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া সহজতর হয়েছে।

৭. মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সকল ব্যবস্থাপনার খরচ কমে আসছে।

৮. জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে

৯. আউটর্সোসিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাচ্ছে।

৯. যেকোন তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া সম্ভব।

১০. অন লাইন লাইব্রেরি, অন লাইন ইউনিভার্সিটি, ই-বুক, অনলাইন পেপার প্রভৃতি সুবিধা ভােগ করা যাচ্ছে।

১১. সারা পৃথিবী হাতের মুঠায় এসেছে।



বিশ্বায়নের নেতিবাচক সম্ভাবনা: 


Globalization বা বিশ্বায়ন নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদের একটি প্রক্রিয়া বা অর্থনৈতিক কৌশল। উপনিবেশবাদের যুগ শেষ হলেও এখন চলছে বিশ্ব নয়া উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদের লগ্নি পুঁজি যুগ। সেদিনকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আজ আর সৈন্যসামস্ত নিয়ে দেশ দখল করে শাসন ও শােষণ করে না। এখন তারা পুঁজি লগ্নির মাধ্যমে চালায় প্রত্যক্ষ শােষণ ও পরােক্ষ শাসন। বিশ্বায়ন তৃতীয় বিশ্বের জন্য এই শােষণেরই ধারক ও বাহক। তাই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে তৃতীয় বিশ্বের প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, অথচ হারাবার ভয় ব্যাপক। পুঁজিবাদের বিশ্বায়নের বা Globalization এর মােড়ক নব্য সাম্রাজ্যবাদই তাদের ওপর অগাধ রাজত্ব করে যাচ্ছে এবং উন্নত দেশের উৎপাদিত দ্রব্য ভােক্তা শ্রেণিতে পরিণত করে চলেছে। ফলে অনুন্নত দেশের কলকারখানাগুলাে অবাধ প্রতিযােগিতায় টিকে থাকতে না পারায় তা দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মােকাবিলা করতে না পারলে অনুন্নত দেশগুলোর ভবিষ্যৎ হবে আরো অন্ধকার। বিশ্বায়নের প্রভাবে অনুন্নত দেশের শিল্প ধ্বংস হতে বাধ্য। কেননা বিদেশী পণ্যের সাথে প্রতিযােগিতায় দেশীয় পণ্য টিকে থাকতে পারবে না। বিশ্বব্যাংকের দেয়া কাঠামােগত সংস্কার নীতি বাস্তাবায়নেও এসব দেশ আরাে বেশি সমস্যায় পতিত হবে বলেই অভিজ্ঞ মহলের বিশ্বাস। সুতরাং বলা যায় বিশ্বায়নে অবাধ প্রতিযােগিতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলাের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন।


সংক্ষেপে বিশ্বায়নের নেতিবাচক সম্ভাবনা সমূহ হলাে-


১. ইন্টারনেট প্রযুক্তির ফলে অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের গােপনীয়তা থাকছে না অর্থাৎ তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে।

২. সাইবার আক্রমণ বাড়ছে

৩. ই-কমাস হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

৪. ইন্টারনেটের ফলে সবকিছু সহজলভ্য হওয়ায় যুব সমাজ সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

৫. সবল ও দুর্বলের ব্যবধান বাড়ছে।

৬. ডিজিটাল ডিভাইড দ্রুত বাড়ছে ও অদক্ষরা কর্ম হারাচ্ছে

৭. বিশ্বায়নের অবাধ প্রতিযোেগিতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন



বিশ্বগ্রাম ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানসমূহ (Main elements of Global village)


তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামে পরিবর্তিত হচ্ছে। যে উপাদানগুলো বিশ্বগ্রাম ধারণা সংশ্লিষ্ট তা উল্লেখ করা হলাে


যোগাযোগ


আকাশ, জলপথ ও সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। রেলওয়ে ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন- টাইম-টেবিল তৈরি করা, আসন সংরক্ষণ করা, কোন ট্রেন কোন ট্র্যাকে যাবে তা নির্ধারণ, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত ট্রাফিক লাইন সকল সড়কের সাথে সমন্বয় রেখে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বু-টুথ, ওয়াইফাই ও GPRS পদ্বতিতে গাড়ীর গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশের রেলওয়ের টিকিট ব্যবস্থা এবং কিছু বাস কোম্পানির টিকেটিং বা সিট রিজার্ভেশন ইন্টারনেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। রেডিও ও টেলিভিশন বিভিন্ন তথ্য সম্প্রচার করে যোগাযােগ ব্যবস্থার মানকে উন্নত করতে সাহায্য করছে। ফ্যাক্স, টেলিপ্রিন্টার, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক মেইল ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টেক্সট মেসেজ, ভয়েস মেসেজ অতি অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে। টেলিফোন, মােবাইল ফোন, টেলিকনফারেন্সং, ভিডিও

কনফারেন্সিং ব্যবহার করে আমরা নিজেদের মধ্যে সরাসরি অনুভূতি বিনিময় করতে পারছি যা যোগাযােগ মাধ্যমে বিপ্লব এনে দিয়েছে। আমরা ইন্টারনেটের বুলেটিন বাের্ডের সাহায্যে যেকোনো তথ্য খুব সহজেই বিনিময় করতে পারছি।


নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় যোগাযােগ মাধ্যম বর্ণনা করা হলাে


ই-মেইল (E-mail):


ই-মেইল শব্দের অর্থ হলাে ইলেকাট্রনিক মেইল। দ্রুত ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম হলাে ই-মেইল। তথ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবিত নতুন ডাক ব্যবস্থা যা হার্ডওয়ার ও সফটওয়ারের সমন্বয়ে তৈরি। খুব দ্রুত ও অল্প সময়ে চিঠিপত্র, অন্যান্য ডকুমেন্ট নির্ভূলভাবে গন্তব্যস্থানে পৌছানাে যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ব্যবসা বানিজ্য, লাইব্রেরি, ইতিহাস ঐতিহ্য ব্যবহারের জন্য অডিও, ভিডিও, ডকুমেন্ট এমনকি চ্যাটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। একজন এর কাছ থেকে একাধিক জনকে E-mail করা যায়। উইকিপিডিয়া অনুসারে "Electronic mail or email is a method of exchanging digital message from an autor to one or more recipients" ই-মেইলের জন্য যে জিনিসগুলাে প্রয়োজন তা হলা- কম্পিউটার, বা স্মার্ট ফোন, মডেম, ইন্টারনেট সংযোগ এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস। যে ই-মেইল প্রেরণ করবে এবং যার কাছে প্রেরণ করবে উভয়েরই অ্যাড্রস

থাকতে হবে। ই-মেইল এর দুটি অংশ থাকে ব্যবহারকারীর, পরিচিতি (User identity) এবং @ এর পর Domain প্রথম অংশে name থাকে। যেমন: masud5972@gmail.com. masud-Irc@yahoo.com.



টেলিকনফারেন্সিং (Teleconferencing):


টেলিযােগাযােগের মাধ্যমে সভা অনুষ্ঠানের প্রত্রিয়াকে টেলিকনফারেন্সিং বলে। এই সভাকে টেলিকনফারেন্স বলেটেলিকনফারেন্স এর মাধ্যমে বিভিন্ন সভা, সেমিনার বা দলবদ্ধভাবে যােগাযােগ করা যায়। ভিন্ন ভৌগলিক দূরত্বে কিছু ব্যক্তি অবস্থান করে টেলিযাগাযােগ সিস্টেমের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কোন সভা অথবা সেমিনার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। টেলিকনফারেন্স এর জন্য সংযােগ, মাইক্রোফোন, MIC ও স্পীকার এবং

প্রয়ােজনীয় সফটওয়্যার প্রয়ােজন হয়। বর্তমানে মােবাইল ফোনে টেলিকনফারেন্সিং-এর ব্যবস্থা আছে ।



ভিডিও কনফারেন্সিং (Video confereneing):


টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই বা ততােধিক ভৌগলিক অবস্থানে অবস্থানরত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কথােপকথন ও পরস্পরকে দেখত পারার মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকে ভিডিও কনফারেন্সিং বলে।এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এমনকি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেকোন ব্যক্তি ইন্টারনেট সংযোেগের মাধ্যমে ছাত্র, ডাক্তার রোগী, রাজনীতিবিদ, জনগণ, গবেষক এমনকি পারিবারিক আত্মীয়, স্বজনের সাথে যােগাযােগ এর এটি একটি জনপ্রিয় যােগাযােগ মাধ্যম। স্কাইপি বা ইয়াহু মেসেঞ্জার ইত্যাদি ব্যবহার করে খুব সহজেই ভিডিও কনফারেন্সিং করা যায়। ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য প্রয়োজন হয় ওয়েবক্যামেরা, ভিডিও ক্যাপচার কার্ড, মডেম এবং ইন্টারনেট সংযােগ।



রিজার্ভেশন সিস্টেম (Reservation system):


যোগাযােগের আর একটি মাধ্যম হলাে রিজার্ভেশন সিস্টেম। ইন্টারনেটের সাহায্যে আমরা দূরবর্তী স্থানে থেকেও আসন সংরক্ষণ বা বুকিং দিতে পারি। বর্তমানে এয়ারলাইন, রেলওয়ে, বাস, লঞ্চ, হােটেল, মােটেল ইত্যাদিতে তাদের নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সিট বুকিং দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে কম সময়ে ঘরে বসে অগ্রীম আসন সংরক্ষণ করা যায়। বিমান কোম্পানীর বিভিন্ন স্থানের এজেন্টরা নির্দিষ্ট সময়ে ভ্রমনের জন্য এখানে টিকেট বিক্রি করে। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিস্টেমে সিট বুকিং ও ক্রয় এর ব্যবস্থা করে থাকে।




কর্মসংস্থান (Employment):


গ্লোবাল ভিলেজের ফলে চাকরি এখন আর স্থান বিশেষে নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবন্ধ নেই। চাকরি করার স্থানও এখন আর নির্দিষ্ট নয়। এখন যেকোনাে স্থানে অনলাইনে আবেদন করা যায়, আবার অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে চাকরিপ্রার্থী যেমন নিজের যােগ্যতা অনেক জায়গায় উপস্থাপন করতে পারে আবার চাকরিদাতারাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে

উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এমন ওয়েব www.bdjobs.com, www.prothom-alojobs.com ইত্যাদি। তাছাড়া আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে অনলাইনের মাধ্যমে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুসারে কাজ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। আউটসােসিং হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজেরা না করে তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করিয়ে নেওয়া। ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করার জন্য কিছু ওয়েবসাইট হলাো www. odesk.com

www.peopleperhour.com, www.freelancer.com I

তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন নতুন চাকরির সৃষ্টি করেছে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে। যারা আউটসোর্সিং করেন তাদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। আউটসোর্সিং মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের জন্য যেকোন একটি প্রােগ্রামের উপর দক্ষ হতে হয় এবং ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার থাকতে

হয়। তবে একই সাথে এটি বিভিন্ন ধরনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরির সুযােগকে হ্রাস করেছে। কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে অফিসের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য বা মেশিন টুলগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন কম লােকবলের প্রয়ােজন পড়ে। পূর্বে এক্ষেত্রে বহু লােককে কাজ করতে হতাে। তবে কম্পিউটার চালিত প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যেসব কাজের সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর জন্য বিভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন লােকবলের প্রয়ােজন হয়। আমাদের দেশের Bangladesh Overseas Employment and services limited (BOESL) জন্য দেশ বিদেশে খােজ খবর রাখত। কর্মক্ষেত্রগুলাে সভাক্ষেত্র হবে এবং অফিস চলে আসবে বাসায় ফলে শহরের যানযট লাঘব হবে মানুষের মানসিক ও শারিরীক চাপ কমে যাবে। অফিস খরচ পরিবারিক খরচে চলবে। খরচ কমে যাবে কিছু উপার্জন বেড়ে যাবে ফলে উন্নত হবে দেশ ও জাতি।


শিক্ষা (Education): 


গ্লোবাল ভিলেজ শিক্ষা ক্ষেত্রে এনে দিয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তথ্য ও যােগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর দূর দূরান্তে বসে শিক্ষার্থীরা ই-লাইব্রেরি, ভার্চুয়াল ক্যাম্পাস ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। তাছাড়া তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্য বিষয়বস্তু, পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষকদের পেশাদারি দক্ষতা উন্নয়ন করা সম্ভব। প্রাথমিক শ্রেণিগুলোতে কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে বর্ণ পরিচয়, গল্পের মাধ্যমে শিক্ষাদান, উচ্চারণ শেখা, প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষা ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। ডিজিটাল কনটেন্ট-এর সাহায্যে স্থির ও চলমান চিত্রের সাহায্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান উপস্থাপন করা যায়। প্রতিটি বিভাগের প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষক ও ছাত্রের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের কাজ বন্টন করা, ক্লাস রুটিন ও পরীক্ষার রুটিন ইত্যাদি তৈরিতে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের জটিল বিষয়ের সমাধান ইন্টারনেটের মাধ্যমে অতি সহজেই সংগ্রহ করা যায়। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাবলি কম্পিউটারের স্মৃতিতে মজুদ রাখা হয়। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী স্মৃতি থেকে এ সমস্ত তথ্যাদি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। নৈর্ব্যক্তিক বিষয়ের উত্তরপত্র কম্পিউটার সংযুক্ত OMR ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় এবং প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে ফলাফল তৈরি করে তা ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টও কম্পিউটারের সাহায্যে করা যায়। তাছাড়া অনলাইনে পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করা যায়। ই-ক্লাসরুমের মাধ্যেমে শিক্ষার্থীরা নানা দেশের শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। এক কথায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, ইন্টারনেট এর প্রয়ােগ, লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা, পরীক্ষা ফলাফল তৈরি দূরশিক্ষাসহ, ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য ব্যবস্থাপনায় তথ্য ও যোগাযােগ প্রযুক্তির অবদান ব্যাপক।



চিকিৎসা (Treatmment): 


কম্পিউটারের দ্বারা রোগ নির্ণয় ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের কাজ করলে ভুল হবার সম্ভাবনা কম থাকে। রােগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার পাওয়া যায়। রােগীর সব লক্ষণ ও রক্ত, মূত্র ইত্যাদি পরীক্ষার ফল কম্পিউটারে ইনপুট দিলে কম্পিউটার উভয়ের তুলনা করে সম্ভাব্য রােগ বলে দেয়। এছাড়া কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত স্ক্যানার মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট সূক্ষ্মভাবে বিচার করে কোথাও কোনাে অস্বাভাবিকতা আছে কি না, বা থাকলে কী ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে বলে দিতে পারে। চিকিৎসা ছাড়াও হাসপাতাল ও ক্লিনিকের প্রশাসনিক দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য কম্পউটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ক্যান্সার-এর চিকিৎসা ও টিউমারের গঠন প্রকৃতি সম্পর্কে কম্পিউটারের সাহায্যে গবেষণার কাজ করা হয়। এছাড়া চোখের দূষ্টিশক্তির ক্ষমতা নির্ণয়, এক্স-রে ইত্যাদি অনেক পরীক্ষার কাজ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সিং, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রযুক্তির সাহায্যে বহু দূরবর্তী স্থান থেকেও চিকিৎসা সুযােগ প্রদান ও গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। এ চিকিৎসা পদ্ধতিকেই টেলিমেডিসিন বলা হয়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে এক দেশে অবস্থান করে অন্য দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা যায়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রােগীরা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাক্তারদের নিকট থেকে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করতে পারে। কম্পিউটার

টমােগ্রাফী উন্নত ধরনের রােগ নির্ণয় যন্ত্র। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও রােগীর যাববতীয় বিষয়াবলী এখন কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।


গবেষণা (Research): 


বর্তমানে সকল বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল। পদার্থের অণু-পরমাণুর গঠন প্রকৃতি, রাসায়নিক দ্রব্যের বিচার বিশ্লেষণে, জটিল গাণিতিক

হিসাব-নিকাশে, প্রাণীকোষের গঠন প্রকৃতি বিশ্লেষণে, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে, সূর্যের আলােকমণ্ডল ও বর্ণমণ্ডলের মৌলিক পদার্থের অবস্থান নির্ণয়ে কম্পিউটার একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। মহাকাশযান ডিজাইন এবং পাঠানাের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কম্পিউটার দ্বারা দ্রুত সমাধান করা হয়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হওয়ার ফলে টেলিফোন, মােবাইল ফোন,

স্মার্টফোন, টেলিভিশন, ই-মেইল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে গবেষণাকর্ম পুনরাবৃত্তি হচ্ছ না। বর্তমান গবেষণা যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে অন্য গবেষক গবেষণার কাজ শুরু করতে পারছে। ফলে গবেষণাকর্ম উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করছে। গবেষণার কাজে বিভিন্ন রকম তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট

রয়েছে যা দিয়ে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যেমে সার্চ করে পাওয়া যায় দুর্লভ তথ্য।যেমন : www google.com, www.msn.com ইত্যাদি



অফিস (Office): 


অফিস আদালত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। অফিস ব্যবস্থাপনার প্রতিটি কাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব। তথ্য ও যোগাযােগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অফিসের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব। তাছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অফিস অটোমেশনের মাধ্যমে অফিসের সার্বিক কার্যক্রম যথা- অফিসের কাজ বন্টন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ডকুমেন্ট তৈরি, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, দৈনিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে অফিসের সার্বিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বাড়ে, অফিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়, অফিসের যাবতীয় তথ্যাদি প্রয়োজনে দীর্ঘ দিনের জন্য সংরক্ষণ করা সহজ হয়। আর ভার্চুয়াল অফিসের মাধ্যমে চব্বিশ ঘণ্টা অফিসের কার্যক্রম চলছে। ফলে অফিসের কার্যকারিতা বাড়ছে।



বাসস্থান Residence): 


পেশাগত উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াকরণ, কনফারেন্স, অফিসের কাজ ইত্যাদি বাড়িতে বসে করা সম্ভব হবে।বাসায় বসে টিভি পর্দায় দোকানের জিনিসপত্রের নমুনা দেখে ক্রয় করা সম্ভব হবে। বাসায় বসে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের পড়াশোনা শিখতে পারবে। কোর্স নির্দেশনা, উত্তরপত্র তৈরির উপকরণ, পরীক্ষা ইত্যাদি বাসায় বসে স্কুলের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারের মাধ্যমে করা সম্ভব হবে। বাড়িতে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে পত্র-পত্রিকা পড়া যাবে। রােগী ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বা তার পরামর্শ নিতে পারবে। খেলা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাসায় বসে অবসর বিনােদনের সুযােগ সৃষ্টি করবে কম্পিউটার। গ্লোবাল বিশ্বে মানুষ তৈরি করছে আধুনিক বাসস্থান বা স্মার্ট হােম। স্মার্ট হােম হলো এমন একটি বাসস্থান যেখানে রিমোট কন্ট্রোলিং বা প্রোগ্রামিং ডিভাইসের সাহায্যে বাড়ির হিটিং সিস্টেম কুলিং সিস্টেম, লাইটিং সিস্টেম ও সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেম ইত্যাদি

নিয়ন্ত্রণ করা যায়।



ব্যবসা-বাণিজ্য (Business): 


বর্তমানে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ডারিং সিস্টেম কম্পিউটারাইজড । কম্পিউটারাইজড সেলস সিস্টেমের দোকান, গুদামঘর এবং প্রধান অফিস সবই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত। ফলে যেকোনো দ্রব্য দোকান হতে বিক্রির সঙ্গে সঙ্গেই তার যাবতীয় হিসাব এবং স্টকের পরিমাণ সঙ্গে সঙ্গে নির্ণয় করা যাচ্ছে খুব সহজেই। কম্পিউটারাইজড মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে দ্রব্যাদি প্যাকেজিং ও লেভেলিং-এর কাজ করা যায়। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে। স্টক একচেঞ্জে শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রেও কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। এখন ইন্টারনেটের সাহায্যে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। ফলে ই-কর্মাসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ই-কমার্স হয়ে উঠছে একুশ শতকের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। ব্যাংকের সকল কার্যক্রম এখন তথ্য ও যোগাযােগ প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। ICT-এর কল্যাণে শক্তিশালী ডেটাবেজ ব্যবহার করে অনলাইন ব্যাংকিং ও মােবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে, যার ফলে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হােল্ডার যেকোনো বাসায় বসে টাকা লেনদেন করতে পারছে। এমনকি মােবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ঘরে বসেও ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও ব্যবহার করা যাচ্ছে। ICT পণ্য MICR-এর ব্যবহার ব্যাংকে চেক সংক্রান্ত জটিলতা একদম কমিয়ে এনেছে। ATM বুথ থেকে টাকা উত্তোলনও ICT-এর ফসল। ফলে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) ব্যবস্থা এখন হাতের মুঠোয়। শেয়ার মার্কেটের সাথেও ইন্টারনেট সংযুক্ত হয়ে সার্বক্ষণিক যােগাযােগ রেখে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির কল্যাণে।



ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োজন সম্পর্ক নিচে আলোচনা করা হলো:


তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে গ্লোবালাইজেশন অর্থাৎ সারা বিশ্বব্যাপি ব্যবসার পরিধি বাড়ানো যায়।


ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অপাচয় রোধ করে।


তথ্য প্রযুক্তি প্রয়ােগের মাধ্যমে যে কোন কাজে আগের চেয়ে কম সময় লাগে অর্থাৎ এর মাধ্যমে সময়সাশ্রয়ী ব্যবস্থা তৈরি করা যায়।


তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে যেকোনাে তথ্যের প্রাপ্যতা সহজ হয় বিশেষ করে ইন্টারনেটের মধ্যে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন

বিশ্বটাকেই পাওয়া যাচ্ছে হতে মুঠোয়। 


ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারে।


তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ইমেইল, এসএমএস, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডের গতিকে ত্বরান্বিত করে।


তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ও চর্চার ফলে ক্রমান্বয়ে সর্বক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।


ব্যবসায়-বাণিজ্যে লাভজনক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে।


ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা যায়।


কম খরচে জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্যের বিপণন বাড়ানো যায়।


তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি গ্রাহকরা ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পছন্দের এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের অর্ডার দিতে পারে


শিল্প প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মনুষ্যশক্তির অপচয় কমায়।


তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিষ্ঠানগুলাের বিভিন্ন ধরনের ব্যয়কে সংকুচিত করে আর্থিক সাশ্রয় ঘটিয়ে থাকে।


মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটায় নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করে। যেমন- সিস্টেম এনালিস্ট, প্রােগ্রামার, ওয়েব ডেভলপার ইত্যাদি।


চাকুরি প্রার্থীরা এখন ঘরে বসেই অনলাইনে বিশ্বের বিভন্ন নামী দামী প্রতিষ্ঠানে যোগাযােগ করতে পারে।


তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ই-গভর্ন্যান্স চালুর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে তথ্য সহায়তা পাওয়া যায়। ফলে দুর্নীতি কমে এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ লাভবান হয়ে থাকে।


উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান করা যায়। যেমন- কল স্টোরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা দেয়া যায়।


তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কারনে প্রতিষ্ঠানে বসেই মানি ট্রান্সজেকশন করা যায়, বিল প্রদান করা যায়।


ভিডিও কনফারেন্সির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দুরবর্তী স্থানের নির্বাহীদের সাথে মিটিং করা যায়। ফলে সময় ও অর্থ বেঁচে যায়।


প্রতিষ্ঠানের প্রােডাক্টের চাহিদা বুঝা যায় এবং দ্রুত সরবরাহের ব্যবহার করা যায়।



ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (Electronic Fund Transfer): 


ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থ স্থানান্তরের পদ্ধতিকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ইলেক্ট্রনিক উপায়ে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার হিসাবের মধ্যে প্রকৃত অর্থের লেন-দেন না ঘটিয়ে শুধুমাত্র হিসাবের মাধ্যমে অর্থের পরিমাণের সমন্বয় সাধন ও আধুনিকরণ করা হয়। লেনদেন কার্যে সুবিধা ও নিরাপত্তার নিমিত্তে ব্যাংকে অটোমেটিক টেলার মেশিন (ATM) ব্যবহার করা হয়। গ্রাহক ব্যাংকের লেন-দেনের জন্য চুম্বককালির রেখা বিশিষ্ট ব্যাংক কার্ড বা এটিএম কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। এটিএম কার্ড উক্ত মেশিনে ঢুকিয়ে এর ছােট কী-প্যাডের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড ও প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দিয়ে অর্থ জমা বা উত্তোলন করা হয়। ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে এতে ক্ষুদ্রাকার মনিটর ও প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। এ ব্যবস্থার ফলে কোনো ব্যক্তি, এমনকি নিরাপত্তা ঝুঁকি ছাড়াই দিন-রাতে যেকোনাে সময় অর্থ স্থানান্তর বা লেন-দেন কার্য সম্পাদন করতে পারে। বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার অটোমেটিক টেলার মেশিনগুলোকে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যাংকের কেন্দ্রিয় কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা হয়। ফলে ব্যাংকের ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশেও অটোমেটিক ট্রেলার মেশিনের

সাহায্যে ব্যাংকে সার্বক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।



ই-কমার্স: 


ইলেকট্রনিক কমার্সকে সংক্ষেপে ই-কমার্স বলা হয়। আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিশেষত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয়, সরবরাহ, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি কাজ করাই হচ্ছে ই-কমার্স। এটি একটি আধুনিক ব্যবসায়িক পদ্ধতি যেখানে পণ্যের কেনা-বেচা অনলাইন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে ই-কমার্স সাইটে বিভিন্ন পণ্যের বর্ণনা ও দাম দেয়া থাকে। গ্রাহকগণ উক্ত সাইটে প্রয়ােজন অনুযায়ী চাহিদাপত্র (Purchase Order) প্রদান করে থাকে এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে মূল্য পরিশােধের ব্যবস্থা করে। অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর বিক্রেতা চাহিদাপত্র অনুযায়ী পণ্য-সামগ্রী ক্রেতার নিকট পৌছানাের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনা বা অন্য কোনাে পরিবহন সংস্থার শরণাপন্ন হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ে মালামাল পৌছে দেয়। ই-কমার্স করা যায় এ ধরনের অতি www.bikroy.com, www.ckhanay.com, www.olx.com.


সংবাদমাধ্যম (News); 


বর্মানে সংবাদপত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করে একটি দেশের প্রতিটি শহর থেকে সংবাদপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। মােবাইল ও টেলিফোনের মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন স্থান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে পত্রিকায় ছাপানাো যাচ্ছে এবং সেই সাথে টিভি ও রেডিওতে সম্প্রচার করা হচ্ছে ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন ব্যবস্থা জোরালো হওয়ার কারণে টিভিতে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লগ বা সামাজিক যােগাযােগের মাধ্যমগুলোতে (ফেসবুক, গুগল প্লাস, ইউটিউব ইত্যাদি) অনেক সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে।







Next Post Previous Post