ই-গভর্ন্যান্স,ই-ইডুকেশন,জেলা ই-সেবা,ই বিলিং সেবা,রেলওয়ের ই-টিকেটিং,ই-স্বাস্থ্যসেবা,ই-পর্চা সেবা,ই-পূর্জি এবং ই-এটিএম বলতে কি বুঝায়?

ই-গভর্ন্যান্স বলতে কি বুঝায়?

গুড গভর্ন্যান্স বা সুশাসনের জন্য দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রচলনের ফলে সরকারি ব্যবস্থাসমূহকে আধুনিক ও যুগােপযােগী করার পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এর ফলে নাগরিকের হয়রানি ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটে এবং দেশে সুশাসনের পথ নিষ্কন্টক হয়। শাসন ব্যবস্থায় ও প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগই হচ্ছে ই-গভর্ন্যান্স। ই-গভর্ন্যান্সের মূল বিষয় হলাে নাগরিকের জীবনমান উন্নত করা এবং হয়রানিমুক্ত রাখা। ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে তথ্য ও যােগাযোগ প্রযুক্তি কোনাে কোলাে কার্যক্রম ৩৬৫ দিনের ২৪ ঘন্টায় করা সম্ভব।যেমন- ATM সেবা, mobile ব্যাংকি, তথ্য সেবা ইত্যাদি। ফলে, নাগরিকরা নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে সেবা প্রহণ করতে পারে।অন্যনিকে ই-গভর্ন্যান্স চালুর ফলে সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধি পেরেছে, কর্মীদের দক্ষতাও বেড়েছে। ফলে দ্রুত সেবা প্রদান হচ্ছে। বাংলাদেশে ই-গভর্ন্যান্স চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর হয়েছে। সকল ক্ষেত্রে ই-গভর্ন্যান্স চালু হলে সুশাসনের পথে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।

ই-ইডুকেশন সেবা বলতে কি বুঝায়?

একটা সময় ছিল যখন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করা ছিল পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য এক বিড়ম্বনার ব্যাপার। বিশেষ করে প্রধান প্রধান শহর থেকে দূরবর্তী গ্রামে অবস্থানরতদের পক্ষে এটি ছিল দুষ্কর। মাত্র দুই-দশক আগেও এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সাত দিন পরেও অনেকেই তাদের ফলাফল জানতে পারত না। কিন্তু বর্তমানে ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট এবং মােবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা যায়। ফলে, ফলাফল জানার যে বিড়ম্বনা ছিল সেটির অবসান হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ই-ইডুকেশনের আর একটি উদাহরণ হলাে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য মােবাইল ফোনে আবেদন করার সুবিধা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পূর্বে কক্সবাজার জেলার একজন শিক্ষার্থী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক হলে তাকে অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন করতে হতাে। এজন্য নিজে অথবা প্রতিনিধিকে সিলেট গিয়ে একবার ভর্তির আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং পরে আবার আবেদনপত্র জমা দিতে হতো। বর্তমানে মােবাইল ফোনেই এই আবেদন করা যায়। ফলে, ভর্তিচ্ছুদের ভর্তির আবেদন ফরম জোগাড় ও জমা দেওয়ায় জন্য শহর থেকে শহরে ঘুরতে হয় না।

ই-জেলা সেবা বলতে কি বুঝায়?

আবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সকল সেবা স্বল্প সময়ে, কম খরচে এবং ঝামেলাহীনভাবে পাওয়ার জন্য চালু হয়েছে জেলা ই-সেবা কেন্দ্র। এর ফলে আগে যেখানে কোনাে সেবা পেতে ২/৩ সপ্তাহ লাগতাে, সেটি এখন মাত্র ২-৫ দিনে পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তথ্যের ডিজিটালকরণের ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় কম লাগছে। সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন দলিল, পর্চা প্রভৃতির নকল প্রদানে সংশ্নিষ্ট স্তরের সক্ষমতাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

ই-বিলিং সেবা বলতে কি বুঝায়?

নাগরিক যন্ত্রণার আর একটি উদাহরণ হলো পরিসেবাসমূহের বিল পরিশােধ। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির বিল পরিশােধের গতানুগতিক পদ্ধতি খুবই সময়সাপেক্ষ এবং যন্ত্রণাদায়ক, কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ কর্মময় দিন বিদ্যুৎ বিল পরিশােধেই নাগরিককে ব্যয করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে মােবাইল ফোন কিংবা অনলাইনে এই বিল পরিশােধ করা যায়। কেবল বিদ্যুৎ নয়, পানি ও গ্যাসের বিলও এখন অনলাইনে ও মােবাইল ফোনে পরিশােধ করা যায়।

ই-পূর্জি সেবা বলতে কি বুঝায়?

দেশের প্রথম দিককার ই-সেবাসমূহের একটি হলো ই-পূর্জি সেবা। দেশের ১৫টি চিনিকলের সকল আখচাষি এখন এসএমএসের মাধ্যমে পূর্জি তথ্য পাচ্ছে। ই-পূর্জি সেবা হচ্ছে চিনিকলসমূহে কখন আখ সরবরাহ করতে হবে সে জন্য আওতাধীন আখচাষিদের দেওয়া একটি অনুমতি পত্র। এসএমএসের মাধ্যমে আখচাষিরা তাৎক্ষণিকভাবে পূর্জির তথ্য পাচ্ছে বলে এখন তাদের হয়রানি ও বিডম্বনার অবসান হয়েছে। পাশাপাশি সময়মতাে আখের সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় চিনিকলের উৎপাদনও বেড়েছে।

ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম (ই-এটিএম) সেবা বলতে কি বুঝায়?

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞলে নিরাপদে, দ্রুত ও কম খরচে টাকা পাঠালাে যায়। ১ মিনিটের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানো যায়। দেশের প্রায় সকল ডাকঘরে এই ই-সেবা পাওয়া যার।

ই-পর্চা সেবা বলতে কি বুঝায়?

বর্তমানে দেশের সকল জমির রেকর্ডের অনুলিপি অনলাইনে সংগ্রহ করা যায়। এটিকে বলা ই-পর্চা সেবা পূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীগণ বড় বড় রেকর্ড বই থেকে তথ্যসমূহ পূর্ব নির্ধারিত ছকে পূরণ করে আবেদনকারীকে সরবরাহ করতেন। এজন্য আবেদনকারীকে যেমন সরাসরি উপস্থিত হতে হতো তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীরাও গতানুগতিক পদ্ধতিতে পর্চা তৈরি করতেন। বর্তমানে এটি ই-সেবার আওতায় আসাতে আবেদনকারী দেশ-বিদেশের যেকোনাে স্থান থেকেই নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে পর্চা সংগ্রহ করতে পারেন।

ই-স্বাস্থ্যসেবা বলতে কি বুঝায়?

বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকরা এখন মােবাইল ফোনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এজন্য দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে একটি করে মােবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। দেশের যেকোনাে নাগরিক এভাবে যেকোনাে চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পারেন। এছাড়া দেশের কয়েকটি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে রােগী হাসপাতালে না এসেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা ও পরামর্শ পাচ্ছেন।

রেলওয়ের ই-টিকেটিং ও মােবাইল টিকেটিং সেবা বলতে কি বুঝায়?

বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট এখন মােবাইল ফোনেও ক্রয় করা যায়। আবার অনলাইনেও টিকেট সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, নিজের সুবিধামতাে সময়ে রেলস্টেশনে না গিয়েও নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকেট সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে। মােবাইল ফোন বা অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করা হলে ট্রেন ছাড়ার অল্প সময় পূর্বে যাত্রীকে স্টেশনে যেতে হয় এবং মােবাইল ফোন বা অনলাইনে প্রাপ্ত গােপন নম্বর প্রদর্শন করে সেখানে নির্ধারিত কাউন্টার থেকে যাত্রার টিকেট সংগ্রহ করে নিতে হয়।