স্যার চার্লস উডের ডেসপ্যাচ নীতি।
১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা কি ছিল? অথবা, স্যার চার্লস উডের ডেসপ্যাচ কি?
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটেনে বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উড ১৮৫৪ সালের ১৯ জুলাই "Education Despatch" নামক একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। এতে ভারতবর্ষে দেশীয় ও ইংরেজি শিক্ষার উন্নতি ও প্রসারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৮৫৪ সালের এ ডেসপ্যাচ ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষা বিস্তার কাঠামাের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
চার্লস উডের ডেসপ্যাচ ১৮৫৪
Education Council এর সভাপতি স্যার চার্লস উড শিক্ষাক্ষেত্রে কতকগুলাে নীতি প্রবর্তন করেন, যা উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত। উডের ডেসপ্যাচের মাধ্যমেই ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামাের ভিত্তি স্থাপিত হয়। উড়ের ডেসপ্যাচের ভিত্তিতেই ১৮৫৫ সালের ১৫ জুন হিন্দু কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে এতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় । এ সময় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বধানের জন্য Director of Public Instructor-কে নিয়োগ করা হয়। কলেজগুলােতে আইন ক্লাস খােলা হয়। কলকাতা ও হুগলিতে সাধারণ স্কুল ও তৎসংশ্লিষ্ট মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। অবশ্য কিছু শর্তাদির কারণে মুসলমানদের সেখানে প্রবেশ দুঃসাধ্য ছিল।
১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা
১৮৫৪ সালে ইংল্যান্ডস্থ বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড (Charles Wood) বাংলা তথা ভারতে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কতিপয় সুপারিশ সংবলিত একটি পরিকল্পনা পেশ করেন যা চার্লস উডের ডেসপ্যাচ নীতি নামে পরিচিত।এ পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল, যথা-
- ক. শিক্ষার জন্য একটা পৃথক শাসন বিভাগের (Separate Department of the Administration for Education) সৃষ্টি।
- খ. কলকাতা, বােম্বাই ও মাদ্রাজ শহরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
- গ. সকল শ্রেণীর বিদ্যালয়ের শিক্ষকের শিক্ষার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন।
- ঘ. বর্তমানে যে সকল সরকারি স্কুল ও কলেজ আছে তার পরিচালনার সুব্যবস্থা ও প্রয়োজনে সেগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি।
- ঙ. নতুন নতুন মাধ্যমিক স্কুলের প্রতিষ্ঠা।
- চ. প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে সকল পাঠশালা আছে সেগুলোর উন্নতি সাধন।
- ছ. বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি, অর্থ দানের ব্যবস্থা।
- জ. সাধারণ লোকের জীবিকা উপার্জনের উপযোগী কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা
- ঝ. মেধাবী ছাত্ররা যাতে ক্রমশ উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারে সেজন্য বৃত্তি দানের ব্যবস্থা।
- ঞ. উচ্চশিক্ষা ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে এবং প্রাথমিক ও নিম্নশ্রেণীর শিক্ষা বাংলা ভাষার মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
- ট. স্ত্রী শিক্ষার উন্নতির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও সরকারি সাহায্য দান।
- ঠ. সকল প্রকার সরকারি চাকরিতেই অশিক্ষিত অপেক্ষা শিক্ষিতদের অধিকতর দাবি প্রতিষ্ঠা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নানাবিধ ক্রটি-বিচ্যুতি থাকলেও ১৮৫৪ সালের চার্লস উডের ডেসপ্যাচ নীতি আধুনিক শিক্ষার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ শিক্ষানীতিতে শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নের রূপরেখা অঙ্কন করা হয়েছিল। তাই ১৮৫৪ সালের শিক্ষা পরিকল্পনা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।