ফ্যাসিবাদ কি?
ফ্যাসিবাদ কি? ফ্যাসিবাদ বলতে কি বুঝায়?
উত্তর : ভূমিকা : বিশ শতকে যে কয়টি মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক তত্ত্ব দানা বেধে উঠেছিল তার মধ্যে "ফ্যাসিবাদ" ছিল অন্যতম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ইতালির বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী বেনিটো মুসােলিনির নেতৃত্বে ইতালিতে ফ্যাসিবাদ নামক প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারার বিকাশ ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালি মিত্রশক্তির পক্ষে জার্মানির বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছিল। কিন্তু বিজয়ী মিত্রশক্তির অন্যতম অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও ইতালির যুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য সফল হয় নি। উপরন্তু ইতালি যুদ্ধজনিত নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইতালির বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযােগে মুসােলিনির নেতৃত্বে ইতালিতে ফ্যাসিবাদ নামক নতুন একটি রাজনৈতিক ভাবধারার উত্থান ঘটে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সাথে ইতালির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ইতালিতে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে।
শাব্দিক অর্থে ফ্যাসিবাদ :
ফ্যাসিজম (Fascism) শব্দটি ল্যাটিন শব্দ "Fascio' থেকে এসেছে। এ শব্দটির অর্থ হলো এক বােঝা লাঠির সাথে একটি কুঠার। 'pascio' শব্দটি ছিল ঐক্য, সংহতি এবং কর্তৃত্বের প্রতীক। প্রাচীন রােমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতীকরূপে এক বােঝা লাঠির সাথে একটি কুঠার বাঁধা থাকত। সাধারণত শক্তিশালী কর্তৃত্ব বুঝাতে এটা ব্যবহৃত হতো।
ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইতালির বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক নেতা বেনিটো মুসোলিনি ও জার্মানির এডলফ হিটলার কর্তৃক অনুসৃত বর্বর, অবৈজ্ঞানিক ও একনায়কসুলভ স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতবাদ বা কর্মপন্থা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সাধারণভাবে ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত।ফ্যাসিবাদ একটি একনায়কতান্ত্রিক মতবাদ। এটি এমন এক মতবাদ যেখানে রাষ্ট্রই সর্বেসর্বা। এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে কোনাে মূল্য দেওয়া হয় না। গণতন্ত্র বলতে ফ্যাসিবাদে কিছুই নেই। এখানে সবকিছুই করা হয় রাষ্ট্রের জন্য, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুই করা যায় না। এমনকি এ মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশ এবং সংগঠনের অধিকারও কারাে থাকে না।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, লেখ জজক ও চিন্তাবিদগণ বিভিন্নভাবে ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলাে :
ইবেনস্টাইনের মতে,ফ্যাসিবাদ হলো অন্ধ জাতীয়তাবাদী, জাতি-বিদ্বেষী, আগ্রাসী এবং সাম্রাজ্যবাদী উদ্দশ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত একদলীয় সরকার এবং সমাজের এক সামগ্রিকতাবাদী বা সর্বগ্রাসী মতবাদ।অধ্যাপক সেবাইনের মতে,
ফ্যাসিবাদ হলো পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ভাবধারার সমন্বয়।মরিস ক্রান্সটনের মতে,
ফ্যাসিবাদ হচ্ছে হেগেলের অধিবিদ্যামূলক চিন্তাধারা এবং সােরেলের সক্রিয়তাবাদী মতবাদের সমস্বয়।জর্জ ডিমিট্রভের মতে,
ফ্যাসিবাদ এমন কোনো রাষ্ট্রশক্তি নয়, যা বুর্জোয়া এবং শ্রমিক শ্রেণীর উর্ধ্বে অথবা পেটি বুর্জোয়াদের বিদ্রোহ নয়।তিনি ফ্যাসিবাদকে লগ্নি-পুঁজির কর্তৃত্ব নামে অভিহিতে করেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ফ্যাসিবাদ হলাে এমন এক মতবাদ যেখানে রাষ্ট্রই সর্বেসর্বা। এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে কোনো মূল্য দেওয়া হয় না। গণতন্ত্র বলতে ফ্যাসিবাদে কিছুই নেই। এখানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুই নেই। সবকিছুই রাষ্ট্রের জন্য। কোনাে কিছুই রাষ্ট্রের বাইরে নয়।