ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য সমূহ ।

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯২২ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশৃঙ্খল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে ইতালিতে বেনিটো মুসােলিনি "ফ্যাসিবাদ" প্রতিষ্ঠা করেন। ফ্যাসিবাদ হলো কর্তৃত্ববাদী সরকারের একটা অভ্যূত্থান। সাধারণত শক্তিশালী কর্তৃত্ব বলতে এটি ব্যবহৃত হয় । এটি একটি আন্দোলন ও একটি আদর্শ সাম্যবাদ, পুঁজিবাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও আন্তর্জাতিকতার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ।

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য সমূহ :

নিম্নে ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. গণতন্ত্র বিরােধী : ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক দর্শনে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা হয় না। ফ্যাসিবাদের মতে, গণতন্ত্র সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্টতম সরকার ব্যবস্থা। তাই তারা বলেন, জনগণ নয় রাষ্ট্রই সার্বভৌমত্বের অধিকারী।

২. একদলীয় ও এক ব্যক্তি শাসন : ফ্যাসিবাদে এক ব্যক্তির শাসন ও একদলীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের শ্লোগান হচ্ছে এক দেশ, এক দল, এক আদর্শ, এক নেতা।

৩. ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরাধী : ফ্যাসিবাদ ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এ মতবাদে বলা হয়, রাষ্ট্রের স্বার্থ সব স্বার্থের ঊর্ধ্বে। কাজেই রাষ্ট্রের স্বার্থে ব্যক্তির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিত হয়। তাইতাে ফ্যাসিবাদীরা বলেন, সবকিছুই রাষ্ট্রের জন্য, রাষ্ট্রের বাইরে বা বিরুদ্ধে কিছু নয়।

৪. সমাজতন্ত্র বিরোধী : ফ্যাসিবাদ সমাজতন্ত্রকে অস্বীকার করে। কেননা ফ্যাসিবাদীদের মতে, যেহেতু ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষের কর্মোদ্যম বৃদ্ধি করে এবং পারিবারিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে। সুতরাং তা বিলােপ করা উচিত নয়।

৫. সমরবাদী : ফ্যাসিবাদে সমরবাদের বিশ্বাস করা হয়।তাইতাে দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় সকল ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রনায়কই যুদ্ধকে অপরিহার্য বলে মনে করতেন।

৬. এলিট শ্রেণীর শাসনে বিশ্বাসী : ফ্যাসিবাদ এলিট শ্রেণীর শাসনে বিশ্বাসী। তাদের মতে, এ পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ শাসন করার এবং কিছু কিছু মানুষ শাসিত হওয়ার জন্যই জন্ম নিয়েছে। মুষ্টিমেয় শক্তিশালী ব্যক্তির হাতে অধিকসংখ্যক জনগণ শাসিত হবে এটাই স্বাভাবিক।

৭. শান্তি ও আন্তর্জাতিকতার বিরোধী : ফ্যাসিবাদ শান্তি ও আন্তর্জাতিকতার পরিপন্থী সমরবাদ ও সম্প্রসারণবাদে বিশ্বাসী। এ মতবাদ অনুসারে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হলো যেকোনোভাবে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করা। জাতীয় রাষ্ট্রের গণ্ডি অতিক্রম করে অন্য রাষ্ট্র দখল করা রাষ্ট্রের কাজ।

৮. সাম্রাজ্যবাদী : ফ্যাসিবাদীরা উগ্র জাতীয়তাবাদ বিশ্বাসী হয়ে এ মতবাদের সমর্থক হিসেবে সামরাজ্য বিস্তারে প্রয়াসী হন।

৯. প্রচারতন্ত্রের একচেটিয়া ব্যবহার : ফ্যাসিবাদে জনসংযোগের মাধ্যমগুলোর উপর ক্ষমতাসীন সরকার একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ফ্যাসিবাদ গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাতন্ত্য ও সমাজতন্ত্রের বিরােধী বলে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। এটি এমন এক মতবাদ যেখানে রাষ্ট্রই সর্বেসর্বা। এখানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুই নেই। সবকিছুই রাষ্ট্রের জন্য। কোনো কিছুই রাষ্ট্রের বাইরে নয়।

Next Post Previous Post