চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি ছিল
চিরিস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা করুন ।
১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘােষণা করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল এর সাংবিধানিক নীতিমালা। এতে ভূমির মালিকানা, খাজনা তথা রাজস্ব নির্ধারণ, নিলাম ব্যবস্থা, জমিদার-রায়ত সম্পর্ক, জমিদারদের প্রতি বিধিনিষেধ প্রভৃতি সুস্পষ্ট শর্তের উল্লেখ রয়েছে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যি সমূহ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্যের দিকে দৃষ্টি দিলে এর বৈশিষ্ট্য সমূহ সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।নিম্নে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. জমিদারদের একচেটিয়া মালিকানা প্রতিষ্ঠা
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে জমির উপর জমিদারদের একচেটিয়া মালিকানা প্রতিষ্ঠা। চিরস্থায়ী বন্দোবন্তের পূর্ববর্তী জমিদার ও রাজস্ব আদায়কারীরা জমিদার বা ভু-স্বামী (Land lords) বলে পরিগণিত হয়। তারা সরকারের এজেন্ট হিসেবে ভূমি রাজস্ব আদায় করার অধিকার লাভ করা ছাড়াও নিজ নিজ জমিদারি এলাকায় সমগ্র জমির একচেটিয়া মালিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ কারে।
২. বংশানুক্রমিক জমিদারি স্বত্ব প্রতিষ্ঠা
চিরস্থায়ী বন্দাবস্ত প্রবর্তিত হওয়ায় জমিতে জমিদারদের বংশানুক্রমিক জমিদারি স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. জমির অধিকার থেকে কৃষকদের বঞ্চিতকরণ
রায়ত বা সাধারণ কৃষকদেরকে জমিদারদের প্রজা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং কৃষকরা জমির উপর চিরাচরিত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
৪. বিভিন্ন বিষয়ে জমিদারদের স্বাধীনতা
মালিক হিসেবে জমিদাররা সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়াই জমি বিক্রয়, জমি দান বা যেকোনো কাজে জমি ব্যবহারের স্বাধীনতা লাভ করে। এমনকি তারা প্রজাদের সাথে তাদের দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা লাভ করে।
৫. খাজনা নির্দিষ্টকরণ
সরকারকে দেয় খাজনা বা রাজস্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে স্থিরীকৃত থাকবে বলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে উল্লেখ করা হয়।
৬. জমিদারি বাজেয়াপ্ত ও নিলামের ব্যবস্থা
নির্দিষ্ট দিনে ও কিস্তিতে সরকারকে দেয় খাজনা বা রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হলে জামদারি বাজেয়াপ্ত ও নিলাম করার ব্যবস্থা করা হয় যা 'সূর্যাস্ত আইন (Sunset Law)' নামে খ্যাত।
৭. বিভিন্ন সুবিধা হতে জমিদাররা বঞ্চিত
আঞ্চলিক অভিজাত শ্রেণী হিসেবে বিচার ও পুলিশ ক্ষমতা এবং সায়ের বা শুল্ক আদায়ের ক্ষমতা হতে জমিদারদের বঞ্চিত করা হয়।
৮. জমিদার ও তালুকদারদের পার্থক্য বিলুপ্ত
সর্বোপরি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদার ও তালুকদারদের মধ্যকার পার্থক্য বিলুপ্ত করে উভয় শ্রেণীকেই সমভিত্তিতে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানি সরকার ভূমি প্রশাসনে স্বীয় শাসন সুদৃঢ় করে। জমিদার ও রায়তদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও অধিকার সংবলিত কঠিন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করে কোম্পানি রাজস্ব আয় সুনির্দিষ্ট করে।