চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি? কে কখন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন?
লর্ড কর্নওয়ালিসের সংস্কারসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য সংস্কার ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন যা ভারতীয় উপমহাদেশের ভূমি ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি উল্লেখযােগ্য ঘটনা হিসবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা তথা ভারতে কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্রিটিশরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যে সকল সংস্কার সাধন করেছিল, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল বাংলার ভূমি ব্যবস্থায় সাধিত পরিবর্তনের এমনি একটি পদক্ষেপ । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে বাংলা তথা ভারতে কোম্পানির শাসন ও শােষণ স্থায়ী এবং এর অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদূঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ অনুগত একটি শ্রেণী সৃষ্টিই ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান উদ্দেশ্য।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে প্রবর্তন করেন?
পঞ্চসালা বন্দোবস্ত ও একসালা বন্দোবস্তের ব্যর্থতা এবং এ সম্পর্কে জেলা কালেক্টরদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৮৯-৯০ সালে দশ বছরের জন্য জমিদারদের সাথে জমি বন্দোবস্ত করার সিদ্ধন্ত গ্রহণ করেন যা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত ।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষে লর্ড কর্ণওয়ালিসের যুক্তি কি ছিল?
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষে কর্নওয়ালিসের যুক্তি ছিল এই যে, জমিদাররা জমির স্থায়ী মালিক হলে তারা জমির উন্নয়ন ও প্রজাদের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করবে এবং কোম্পানির রাজস্বও আদায় হবে। অধিকন্তু জমিদাররা ব্রিটিশ সরকারের একটি অনুগত শ্রেণী হিসেবে ব্রিটিশ স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কখন প্রবর্তন করা হয়?
কর্নওয়ালিসের এই যুক্তি ও ঘােষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৯২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কোর্ট অব ডাইরেক্টর (Court of Director) তার এই পরিকল্পনা অনুমোদন করে। অতঃপর ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ কর্নওয়ালিস দশসালা বন্দোবস্তকেই চিরস্থায়ী বলে ঘোষণা করেন যা "চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত' (Permanent Settlement) নামে পরিচিত।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলা তথা ভারতে কোম্পানির শাসন ও শোষণকে স্থায়ী এবং অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিতকরণের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল এক অমোঘ হাতিয়ার। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলার কৃষকদের উপর এর প্রভাব ছিল নেতিবাচক ও সুদূরপ্রসারী।