বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সুফিবাদের অবদান।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সুফিগণের অবদান আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সুফিবাদের প্রভাব আলোচনা কর।
উত্তর॥ ভূমিকা : সুফিবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ। সুফিগণ বলেন, আধ্যাত্মিক বিদ্যার প্রগতিশীল প্রকৃতি সাধকের আল্লাহ প্রাপ্তির সবরকে নির্দিষ্ট করে দেয় এবং যাত্রা পথকে কয়েকটি মঞ্জিল ও স্তরে বিভক্ত করে। সাধনার দ্বারা কতিপয় গুণ অর্জন করতে হয়। আবার আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ ও তার নিকট হতে লাভ করতে হয়। সবর, তওবা, তাওয়াক্কুল প্রকৃতি কতিপয় ব্যক্তিগত মতবৈষম্যের উপর গুরুত্বারোপ না করে চুড়ান্ত লক্ষ্যের পরিচয় প্রদান করাই হচ্ছে সুফিবাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
সুফিবাদ কি ? সুফিবাদ বলতে কি বুঝায় ? :
ইসলামে মরমি ভাবধারা সুফিবাদ নামে পরিচিত। হৃদয়ের গভীর পরম প্রিয়জনকে খুঁজে বের করে এবং তার সাথে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপনের যে প্রয়াস তাই সুফিবাদ। সুফি সাধকগণ সুফি নামে আখ্যায়িত। আল্লাহর প্রেমের উপলব্ধি ও আত্মার পবিত্রতা বিধানই তাঁদের সাধনার লক্ষ্য। মানবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন সাধন সুফি সাধনার মর্মকথা।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সুফিগণের অবদান :
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ইসলামে প্রচারে সুফিগণের অবদান নিয়ে আলোচনা করা হলো :
বগুড়া জেলা : বৃহত্তর বগুড়া জেলার বিখ্যাত সুফি সাধকগণ হলেন শাহ সুলতান বলখী (রহ), সৈয়দ
আলী যাকির (রহ), তুর্কান শাহ (রহ), হযরত শাহ বন্দেগী (রহ), পীর সয়দ রুকনুদ্দীন (রহ), দেওয়ান শাহাদাৎ হােসেন
(রহ), মকসিদ গাজী শাহকালাম (রহ), গাজী (রহ), পীর ফাতেহ আলী (রহ), সুফি হর উল্লাহ (রহ) প্রমুখ।
এসব স্বনাম ধন্য
পীর আউলিয়াগণ নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে এ অঞ্চলের ঘরে ঘরে ইসলামের মধুর বাণী পৌছে দিয়েছিলেন।
পাবনা জেলার : পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় যেসব সুফিসাধক ইসলাম প্রচার করেছিলেন তাদের মধ্য রয়েছে মখদুম শাহ দৌলাহ শহীদ (রহ), শাহ শরীফ জিন্দানী (রহ), আল কাদিরী (রহ) শাহ আফজাল মাহমুদ (রহ), শাহ কালাম (রহ), শাহ কুতুব উদ্দিন (রহ) প্রমুখ। বৃহত্তম পাবনা জেলার এসব বরেণ্য পীর আউলিয়াগণ ইসলামের সুশীতল বাণী প্রচার করেছিলেন।
বৃহত্তর রাজশাহী : রাজশাহী, নওগাঁ, চাপাই নবাবগঞ্জে যেসব পীর মাশায়েখ ইসলাম প্রচার করে অমরত্ব লাভ করেছিলেন তাঁরা হলেন তুরকান শাহ (রহ), শাহ মাখদুম (রহ) শাহদৌলাহ (রহ), মাওলনা আব্দুল ওহাব (রহ), সৈয়দ জয়নুল আবেদীন (রহ), সদর উদ্দীন (রহ), শাহ নিয়ামত, উল্লাহ (রহ) প্রযুখ । এসব পীরের মধ্যে শাহ মাখদুম রুপােস (র) প্রখ্যাত ছিলেন।
খুলনা ও যশোর : খুলনা বিভাগের প্রায় ১০টি জেলায় ইসলাম প্রচার করেছিলেন হযরত খানজাহান আলী (র) ও তাঁর সঙ্গী সহচরগণ। এছাড়া ও পীর জয়ন্তী, হযরত খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ (র) প্রমুখ পীর খুলনা অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। হযরত খান জাহান আলীল নাম বাগের হাট জেলায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামকে বারাে আউলিয়ার দেশ বলা হয়। এ বারো জন পীর হলেন হযরত বায়েজীদ বােস্তামী (রহ), শেখ ফরীদ (রহ), পীর বদর (রহ), কতল পীর (রহ), শাহ মহসীন (রহ), শাহ পীর (রহ), শাহ উমর (রহ), শাহ বাদল (রহ), শাহ চাদ আ: (রহ), শাহ জায়েদ (রহ) প্রমুখ। এছাড়া শাহ আমানত শাহ (রহ), শাহ গরীবুল্লাহ (রহ), সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রহ) প্রমুখ এসব পীরের অক্লান্ত পরিশ্রমে চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারিত হয়েছিল ।
বরিশাল : বৃহত্তর বরিশাল জেলায় যেসব পীরের পদচারণায় ইসলাম প্রচার হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন দাউদ শাহ (র), মাওলানা নফিসুর রহমান (র) সাইয়েদুল আরেফীন (র), মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী ।
ঢাকা : ঢাকায় অনেক পীর মাশায়েখ ইসলাম প্রচার করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গােলাপ শাহ (র), শাহ নেয়ামত উল্লাহ (র), শাহ আলী বাগদাদী (র), মাস্তান শাহ (র), পাঁচ পীর (র), দুদু মিয়া প্রমুখ। এসব পীরের মাজার ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে।
বৃহত্তর সিলেট : সিলেট জেলায় যেসব পীর ইসলাম প্রচার করেছিলেন তাদের মধ্যে ওলীকুল শিরমণি হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন। তাঁর আরো ৩৬৫ জন সহযোগী আউলিয়াকে এনেছিলেন যারা সমস্ত বাংলাদেশ ও আশেপাশে ইসলাম প্রচার করেছিলেন।
নােয়াখালী : বৃহত্তর নোয়াখালীতে যেসব সুফিসাধক ইসলাম প্রচার করেছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ মিরান শাহ (রহ); মাওলানা ইমামুদ্দীন (রহ); সৈয়দ আহমদ (রহ) পীর আযম (রহ), সৈয়দ পাগলা (র) ।
ফরিদপুর : ফরিদপুরে যেসব সুফিসাধক ইসলাম প্রচার করেছিলেন তাদের মধ্যে শাহ ফরিদ (র), হাজী শরীয়তউল্লাহ (র), দুদুমিয়া, আল্লামা শামসুল হক (র) প্রমুখ অন্যতম। হাজী শরীয়তউল্লাহ ফরায়েজী আন্দোলনের সূতিকাগার ছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে অসংখ্য সুফি ঘুমিয়ে রয়েছে। তাই এদেশ সুফিদের তীর্থস্থান। এদেশে অসংখ্য পীরের আগমন ঘটেছিল। এদেশের জনগণের কাজকর্মে, চিন্তা-ভাবনায়, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে সুফি দরবেশদের শিক্ষা ও জ্ঞান বিদ্যমান ছিল। তাই বাংলাদেশকে পীর আউলিয়ার দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে অগণিত সুফি সাধকদের আগমন ও তাঁদের ধর্ম প্রচারের ফলেই এদেশের সাধারণ মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে দলে দলে সমবেত হতে থাকে। তাই বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সুফিদের অবদান অপরিসীম।