দ্বৈতশাসন কি

দ্বৈতশাসন কি ? দ্বৈতশাসন বলতে কি বুঝায় ?

দেওয়ানি লাভের পর ক্লাইভ প্রবর্তিত বাংলার শাসনব্যবস্থাকে দ্বৈতশাসন বলা হয়। দ্বৈতশাসনের অর্থ হলাে দুজনের শাসন। নিজামতি বা বাংলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তিরক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ছিল বাংলার নবাবের হাতে। আর বাংলার রাজস্ব আদায়,দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার,জমাজমি বিবাদ সম্পর্কিত বিচার কোম্পানির উপর বর্তায়। বাংলার শাসনের দায়িত্ব দুটি পৃথক সংস্থার হতে চলে যাওয়াই দ্বৈতশাসন । অবশ্য গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ছিল আসলে একটি সাংবিধানিক মুখােশ। মূলত দ্বৈতশাসনের মাধ্যমে পূর্ণ ক্ষমতাই চলে যায় কোম্পানির হাতে। কারণ কোম্পানি দেওয়ানি পেলেও নিজ হাতে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব না রেখে নায়েবে নাজিম রেজা খানের হাতে দেন। অপরদিকে নবাবের কাগজ-কলমে নিজামির দায়িত্ব থাকলেও হাতে-কলমে তা নায়েবে নাজিম রেজা খানের হাতে চলে যায়। আর রেজা খান ছিলেন কোম্পানির দাসানুদাস। সুতরাং কার্যত সকল ক্ষমতাই ছিল কোম্পানির হাতে। পার্সিভ্যাল স্পিয়ার এজন্য বলেন," দ্বৈতশাসনব্যবস্থাকে পরাক্ষ শাসন' (indirect System) বলে অভিহিত করেছেন।

দ্বৈতশাসনের প্রবর্তক কে ছিলেন?

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে লর্ড ক্লাইভের দ্বৈত শাসনব্যবস্থা একটা উল্লেখযােগ্য ঘটনা। পলাশির পর থেকে বাংলার শাসন ব্যবস্থায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যে প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৬৫ সালের দেওয়ানি লাভের মধ্য দিয়ে তাদের সেই প্রভাব অপ্রতিহত হয়ে উঠার সুযোগ পায়। কোম্পানি কর্তৃক দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব শাসনের অধিকার লাভ করার ফলে সম্রাটের প্রতিনিধিরূপে বাংলার সুবাদারের দেওয়ানি ও ফৌজদারি শাসন ক্ষমতা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় যা দ্বৈত শাসনব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। দেওয়ানি লাভের মধ্য দিয়ে বাংলায় দ্বৈতশাসনের যাত্রা শুরু হলেও এর অন্তর্নিহিত ক্রটি ও কুফলের কারণে এ ব্যবস্থার অবসান ঘটে । দ্বৈতশাসনের প্রবর্তক ছিলেন বাংলার তদানীন্তন ইংরেজ গভর্নর লর্ড ক্লাইভ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অতি সাধারণ কেরানি হিসেবে চাকরি গ্রহণ করে নিজ ক্ষমতা, বিচক্ষণতা ও মৌলিক প্রতিভার জােরে তিনি বাংলার গভর্নর পদে উন্নীত হন। প্রথমবার গভর্নর পদে থাকাকালীন (১৭৫৬-৬০) তিনি বাংলায় কোম্পানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি স্থাপন করে কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেন। আর এজন্য যখন কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাংলায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তখন লর্ড ক্লাইভ পুনরায় শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য দ্বিতীয়বার গভর্নর পদে নিযুক্ত হয়ে (১৭৬৫-৬৭) বাংলায় দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করেন।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রক্ষিতে বলা যায় যে, রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা ছিল বাংলার জনসাধারণের জন্য চরম অভিশাপস্বরূপ । দ্বৈতশাসন নবাবকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করে। নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পায় দায়িত্বহীন ক্ষমতা। প্রকৃতপক্ষে দ্বৈতশাসন ছিল একটি Fiction বা কাল্পনিক ব্যবস্থা

Next Post Previous Post