বাংলার অর্থনৈতিক জীবনে দ্বৈতশাসনের প্রভাব
বাংলার অর্থনৈতিক জীবনে দ্বৈতশাসনের প্রভাব আলোচনা কর।
বাংলার অর্থনৈথিক জীবনে দ্বৈতশাসনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী । নিন্মে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. রেশম শিল্প ধ্বংস :
রেশম শিল্প ছিল মুঘল বাংলার গর্ব। কিন্তু দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে রেশম শিল্প বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইংল্যান্ডের বেশি দামের রেশম বস্ত্র শিল্পকে বাংলার প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বাংলায় কেনা সস্তা দামের মুর্শিদাবাদী রেশমের কাপড় ইংল্যান্ডো আমদানি নিষিদ্ধ করে।
২. ব্যবসা-বাণিজ্যে ইংরেজ বণিকদের প্রভাব বৃদ্ধি:
রর্বাট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্য লক্ষ্মী বাঙালির গৃহকোণ ছেড়ে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতি কুপাদৃষ্টি বর্ষণ করে। ইংরেজ বণিকরা দস্তকের ব্যাপক অপব্যবহার চালালে দেশীয় বণিকরা ধীরে ধীরে বাণিজ্য থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
৩. অর্থনৈতিক বিপর্যয় :
রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে নায়েব-সুবাদের উৎপীড়ন ও অত্যাচার এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পলাশির পর থেকে দেশের সম্পদ কমতে থাকে, অথচ রাজস্বের হার প্রতি বছর বৃদ্ধি পেতে থাকে। দিনাজপুর জেলার রাজস্ব ১২ লক্ষ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ লক্ষ টাকায় উন্নীত হয়।ফলে সম্পদের অতিরিক্ত এ রাজস্ব সংগ্রহ করতে রেজা খান কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে অচিরেই বাংলার উপর চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে।
৪. তাঁতিদের দুর্দশা বৃদ্ধি :
দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে তাঁতিদের দুর্দশা বৃদ্ধি পায় । ড. এন. কে. সিংহ-এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, ১৭৭০ সালে তাঁতিদের উৎপন্ন কাপড়ের জন্য যে দাম কোম্পানি দেয় তার পরিাণ ছিল ১৭৩০-৪০ সালের তুলনায় অনেক কম।
৫. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর :
কোম্পানির কর্মচারীদের অর্থ লােভ ও অবাধ লুন্ঠন এবং নায়েবে নাজিম রেজা খানের দুর্নীতি ও কুশাসন বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সৃষ্টি করেছিল। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ফলে বহু কৃষক পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বিপর্যয় বাংলা-বিহারের অর্থনৈতিক কাঠামােয় প্রচন্ড আঘাত হানে।
উপরিউক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ছিল বাংলার জনসাধারণের জন্য চরম অভিশাপস্বরূপ । দ্বৈতশাসন নবাবকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করে। নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পায় দায়িত্বহীন ক্ষমতা। প্রকৃতপক্ষে দ্বৈতশাসন ছিল একটি Fiction বা কারনিক ব্যবস্থা। দ্বৈতশাসন সম্পর্কে মহাজন বলেন,"দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ছিল সাময়িক, ১৭৬৫ সালে ইংরেজগণ যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি ছিল একটি তাৎক্ষণিক চুক্তি ।"