মাৎস্যন্যায় কি? মাৎস্যন্যায় বলতে কি বুঝায়?

মাৎস্যন্যায় কি? মাৎস্যন্যায় বলতে কি বুঝায়? মাৎস্যন্যায় শব্দের অর্থ কি? মাৎস্যন্যায় কাকে বলে?

শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বঙ্গে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয়। আনুমানিক ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এক শতকেও বেশি সময় ধরে গৌড়ের ইতিহাস অস্পষ্ট। হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর (৬৪৬/৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ) পর তার সাম্রাজ্যে নৈরাজ্য ও সংশয় দেখা দেয়, মন্ত্রীরা বলপূর্বক রাজ্য দখল করে নেয় ।চৈনিক দূত ওয়াং-হিউয়েন-সের হঠকারিতায় তিব্বতের ক্ষমতাধর রাজা শ্রং-ছান-গেমপো পরপর কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। সাত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলায় দুটি নতুন রাজবংশ আত্মপ্রকাশ করে; গৌড় ও মগধে (পশ্চিম বাংলা ও দক্ষিণ বিহার) পরবর্তী গুপ্তগণ এবং বঙ্গ ও সমতটে (দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা) খড়গ রাজবংশ। কিন্তু এ রাজবংশের কোনটিই বাংলায় ঐক্যবন্ধ ও শক্তিশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল বল মনে হয় না। খ্রিষ্টীয় আট শতকের প্রথমার্ধে পূনঃপনঃ বৈদেশিক আক্রমণে বাংলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল কনৌজ রাজ যশোবর্মণের (৭২৫-৭৫২ খ্রি.) আক্রমণ। কাশ্মীরের ললিতাদিত্য অচিরেই যশোবর্মণের। গৌরবকে ম্লান করে দেন। গৌড়ের পাঁচ জন রাজা ললিতাদিত্য কর্তৃক পরাজিত হয়েছিলেন বলে কাশ্মীরের ঐতিহাসিক কলহন উল্লেখ করেছেন । এ থেক গৌড়ের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে সুম্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় শক্তির অভাবে স্থানীয় প্রধানগণ স্বাধীন হয়ে ওঠেন এবং নিজেদের মধ্যে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লড়াই-এ লিপ্ত হন। পুনপুনঃ বৈদেশিক আক্রমণ রাজনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে এবং তাতে করে বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় ।

মাৎস্যন্যায় কি? মাৎস্যন্যায় বলতে কি বুঝায়?

শশাস্কের মৃত্যুর পরবর্তী একশো বছর বাংলায় কোনাে স্থায়ী সরকার ছিল না বললেই চলে। সমগ্র দেশ অভ্যন্তরীণ কলহ- কোন্দলে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন এবং বৈদেশিক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়েছে। গােপাল-এর উত্থানের আগে খ্রিষ্টীয় আট শতকের শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের রাজনৈতিক অবস্থাকে পাল আমলের একটি লিপিতে (খালিশপুর তাম্রশাসন)মাৎস্যন্যায়বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মাৎস্যন্যায় এর অবসান ঘটান কে?কখন মাৎস্যন্যায় এর অবসান ঘটে?

তিব্বতি সন্ন্যাসী তারনাথ ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি এ মত সমর্থন করে লিখেন: 'প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, ব্রাহ্মণ ও বণিক স্ব স্ব গৃহে (অথবা প্রভাবাধীন এলাকায়) ছিলেন এক এক জন রাজা, কিন্তু সমগ্র দেশে কোনো রাজা ছিলেন না। পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গােপাল এ বিশৃঙ্খল অবস্থায় রাজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং পাল তাম্রশাসনে উল্পিখিত অরাজক অবস্থার (মাৎস্যন্যায়ের) আবসান ঘটান।

মাৎস্যন্যায় শব্দের অর্থ কি? মাৎস্যন্যায় দ্বারা কি বুঝানো হয়?

সংস্কৃত শব্দ মাৎস্যন্যায় বিশেষ অর্থবহ। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে শব্দটির নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে:

যখন দন্ডদানের আইন স্থগিত বা অকার্যকর থাকে তখন এমন অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয় যা মাছের রাজ্য সম্পর্কে প্রচলিত প্রবচনের মধ্যে পরিস্ফুট। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত বড় মাছ ছোটটিকে গ্রাস করে, কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অবর্তমানে সবল দুর্বলকে গ্রাস করবেই। সমসাময়িক পাল লিপিতে এ অর্থবহ শব্দটির প্রয়োগ করে বাংলার তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার মতাে শক্তিশালী শাসন ক্ষমতার অভাবে সম্পূর্ণ অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। গােপাল বাংলার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে মাৎস্যন্যায় অবস্থার অবসান ঘটাতে সমর্থ হন।
Next Post Previous Post