১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তি
১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।
১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তি
দীর্ঘ চার বছর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলার পর ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে জার্মানি বিনাশর্তে মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বে পুনরায় শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ১৯১৯ সালে মিত্রশক্তির প্রতিনিধিগণ ফ্রান্সের ভার্সাই শহরে এক সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিই ঐতিহাসিক ভার্সাই চুক্তি নামে পরিচিত।
১৯১৯ সালের ভার্সাই সম্মেলনের প্রতিনিধিবর্গ
সম্মেলনে ৩২টি দেশের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত হন। তবে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইতালি ও আমেরিকা পরাশক্তির ভূমিকায় অবরতীর্ণ হয়েছিল। রাশিয়া বা শতক্রপক্ষের কোনো প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা ছিল না। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট উড্রো উইলসন, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী ওর্ল্যান্ডো, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিমেনশাে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিমেনশো সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ফ্রান্সের ভার্সাই রাজপ্রাসাদে এ সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির পর্যালােচনা কমিটি
সন্ধির পূর্বে যুদ্ধের দায়দায়িত্ব সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কমিটি গঠিত হয়। ক্ষতিপুরণ কমিটি, বন্দর, নৌপথ, রেলপথ নিয়ন্ত্রণ কার্য সংক্রান্ত বিশ্বরাষ্ট্রকমিটি প্রভৃতি কমিটিগুলাের নেতৃবৃন্দ দীর্ঘ অনুসন্ধান ও পর্যালোচনার পর একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তি কোথায় ও কখন স্বাক্ষরিত হয়
১৯১৯ সালের ২৮ জুন ভার্সাই রাজপ্রাসাদের হল অব মিরবে মিত্রশক্তির নেতৃবৃন্দ কর্তৃক গহীত 'শান্তিচুক্তি' নামক একটি চুক্তিতে জার্মানি স্বাক্ষর দান করে। ইতিহাসে এটি ভার্সাই সন্ধি নামে পরিচিত। জার্মানি পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষরদান করেন হেরসান মুলার এবং ড. জোহান্সবেন ।
১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলি
ভার্সাই সন্ধিতে মূলত জার্মানিকে কোণঠাসা করার জন্য একতরফা শর্ত প্রদান করা হয়েছিল। ইউরোপের স্বাক্ষরিত এই ভার্সাই সন্ধিতে পুনর্বন্টন সংক্রান্ত শর্তাবলি, সামরিক শর্তাবলি, অর্থনৈতিক শর্তাবলি ও রাজনৈতিক শর্তাবলি অন্তর্নিহিত ছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটেনা প্রবাহ এবং এ চুক্তির শর্তাবতি পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য ছিল না। এতে জার্মানির উপর যে জবরদস্তিমূলক শর্ত আরােপ করা হয়েছিল তার জন্য এটাকে শান্তিচুক্তি না বলে একটি বিরাট অপহরণ চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কারণ ভার্সাই চুক্তি যে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করেছিল, এর ফলে ১৯৩৯ সালে ইতিহাসের ভয়াবহতম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংসঘটিত হয়।