ন্যাটো (NATO) : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক জোট।।

ন্যাটো (NATO) কি? ন্যাটো মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি কি সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : বিশ্ব রাজনীতির কাঠামােগত পরিবর্তনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরিমেয় ধ্বংসলীলায় সার্বিকভাবে ইউরোপের সামারিক শক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রন্ত হয়। আর এ ধ্বংসলীলা থেকে মুক্ত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিকে পরাজিত করে সাোভিয়েত রাশিয়া বিশ্বের বুকে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশ্ব রাজনীতি তখন থেকেই দ্বিমেরু আকার ধারণ করে। এক মেরুতে অবস্থান নেয় পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আরেক মেরুতে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া।

ন্যাটো :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার ব্যাপক সামরিক শক্তির বিকাশ ও পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক শক্তির প্রসারে শক্তির ভারসাম্য সমাজতান্ত্রিকদের অনুকূলে চলে যায়। পশ্চিম ইউরোপীয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিস্তার রােধ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বীরদর্পে এগিয়ে আসে পশ্চিম ইউরোপের ভেঙে পড়া অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির পুনরুজ্জীবন ঘটাতে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বুকে সমাজতান্ত্রিক শক্তির প্রসার রােধকল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত হয় NATO। ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল চুক্তিটি সম্পাদিত হয় এবং ২৪ আগস্ট কার্যকর হয়।

ন্যাটো (NATO) সদস্য রাষ্ট্র সমূহ :

ন্যাটোভূক্ত দেশগুলাে হলাে বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, গ্রিস, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, স্পেন, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরা্ষ্ট্র, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পােল্যান্ড, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া, লাটভিয়া, রােমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, আলবেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া । ন্যাটোর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থিত। ন্যাটোর রাজনৈতিক ও সামরিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামাে বেশ জটিল ও বহুমুখী। এটি একটি পরিষদ, তিনটি কমান্ড এবং একটি প্ল্যানিং গ্রুপ নিয়ে গঠিত। জোটের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলাে সকল সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত 'North Atlantic Council'. এরা মন্ত্রী বা স্থায়ী প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠকে মিলিত হন। ন্যাটোর মহাসচিব কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। সহস্র দেশের মধ্য থেকে ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া রয়েছে রাজনৈতিক উপদেষ্টা কমিটি, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটি, প্রতিরক্ষা কমিটি ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কমিটি। এছাড়া সকল সদস্য দেশের 'Chief of staff' বা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়েছে ন্যাটোর সর্বোচ্চ সামরিক সংস্থা। এ সংস্থার মােট খরচের প্রায় ৮০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রবহন করে।

ন্যাটো (NATO)' র দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র যেসব সুবিধা ভোগ করে :

এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যেসব সুবিধা ভােগ করছে..

  • (ক) ইউরােপের উপর তার সামরিক কর্তৃত্ব বজায় রাখতে প্রয়াস পাচ্ছে।
  • (খ) পূর্ব ইউরোপে NATO সম্প্রসারিত হওয়ায় রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ পাচ্ছে।
  • (গ) ভবিষ্যতে জার্মানির সামরিক উত্থান NATO-র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মােকাবিলা করতে পারবে।
  • (ঘ) যুক্তরাষ্ট্র NATO-র মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে NATO-র ভূমিকা ও গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। কারণ যে সমাজতান্ত্রিক ব্লককে অবদমনের জন্য NATO-র জন্ম হয়েছিল সেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাশিয়া ভেঙ যাওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের একচ্ছত্র নৃপতির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বমোড়লের ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

Next Post Previous Post