প্যারিস শান্তি সম্মেলনের সমস্যাসমূহ কি ছিল

প্যারিস শান্তি সম্মেলনের সমস্যাগুলো আলোচনা করুন।

প্যারিস শান্তি সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ উদার মনােভাব নিয়ে অগ্রসর হলেও প্যারিস শান্তি সম্মেলনের সম্মুখে বিভিন্ন সমস্যা উপস্থিত হয়েছিল। এ সমস্যাগুলো ছিল যেমন ব্যাপক তেমনি জটিল সমস্যাগুলাে মূলত রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং ঐতিহাসিক এবং একইসাথে স্বার্থ সংক্রান্ত ছিল।

প্যারিস শান্তি সম্মেলনের সমস্যাসমূহ :

প্যারিসের শান্তি সম্মেলনের সমস্যাগুলা নিম্নে আলােচনা করা হলাে :

১. রাষ্ট্রগুলোর পরস্পরবিরােধী স্বার্থ :

প্যারিস শান্তি সম্মেলনে (প্রেক্ষাপট বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গ সমবেত হয়েছিলেন তাদের নিজেদের আশা-আঙ্খাক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যেই। ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পরস্পরবিরোধী স্বার্থের দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। প্রতিনিধিবৃন্দ নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য বিভিন্ন যুক্তিতর্কের অবতারণা করেন।

২. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব :

যুদ্ধকালীন বিশ্বের পূনর্গঠন সম্পর্কে মিত্রপক্ষের মধ্যে বহু আলােচনা হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন স্বার্থের মধ্যে এক শান্তিপূর্ণ সমন্বয় সাধন করার মতো উপযোগী কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেতৃবর্গের ছিল না। ফলে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট রীতি অনুসারে যুদ্ধপ্রসূত সমস্যাগুলার সমাধান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা :

প্যারিস শান্তি সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রচুর অসুবিধা ছিল। প্যারিস শান্তি সম্মেলনে ৭০ জন রাজনীতিবিদ ও ১০৩৭ জন প্রতিনিধি যােগদান করেন। তাছাড়া ৫৬টি কমিশন ও বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ফলে সিদ্ধাত্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতানৈক্য উপস্থিত হয়।

৪. আদর্শগত সমস্যা :

সম্মেলনের নেতৃবর্গের ভিন্ন মনােভাব ও আদর্শের মৌলিক পার্থক্য সম্মেলন পরিচালনার পথে যথেষ্ট অন্তরায় সৃষ্ট করেছিল। প্যারিস শা্তি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার যে চারজন নেতার উপর অর্পিত হয়েছিল তাদের মধ্য আদর্শগত ঐক্য ছিল না। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। ক্লিমেনশো একমাত্র লক্ষ্য ছিল, জার্মানির ক্ষতি সাধন করে হলেও ফ্রান্সের নিরাপত্তা বিধান যাতে হতে পারে এমন সন্ধিপত্র রচনা করা। লয়েড জর্জ ছিলেন জঙ্গি মনােভাবাপন্ন ব্যক্তি। উড্রা উইলসন ছিলেন শান্তির মূর্ত প্রতীক । ইতালির প্রতিনিধি ওরলেন্ডো বিশ্বশান্তি স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন বটে, কিন্তু সেই সাথে ইতালির স্বার্থও রক্ষা করতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তাই চারজন চার মতের হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হয়।

৫. গােপন চুক্তির প্রতি উইলসনের বিরােধিতা :

উড্রো উইলসনের ন্যায় সততা ও মানবতার ভিত্তিতে দীর্দকাল স্থায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপনের আদর্শের সাথে বিজিত দেশগুলাের বিরুদ্ধে বিজয়ী দেশগুলোর প্রতিশোধ গ্রহণের দৃঢ় সংকল্পের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয় আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপনে ভিত্তিস্বরূপ উইলসন চৌদ্দ দফা শর্ত সংবলিত এক দীর্দ প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং জার্মানি এ প্রস্তাব আংশিকভাবে গ্রহণ করে । অন্যদিকে যুদ্ধ চলাকালীন ইউরােপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনেক গােপন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু এ গােপন চুক্তিসমূহ চৌদ্দ দফার বিরােধী হওয়ায় উইলসন এর বিরোধিতা করেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলােকে আহ্বান করা হয় নি। নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলো যোগদান না করায় শান্তি চুক্তিগুলো পক্ষপাতহীন হয় নি। বিজয়ীরা তাদের পরিকল্পিত সন্ধি ইচ্ছামতো পরাজিতদের উপর চাপিয়ে দেয়। নিরপেক্ষ দেশ উপস্থিত থাকলে প্যারিসের শান্তি সম্মেলন আরাে বেশি ফলপ্রসূ হতাে।

Next Post Previous Post