প্যারিস শান্তি সম্মেলনের নেতৃত্বদানকারী প্রধান প্রতিনিধিবর্গ
প্যারিস শান্তি সম্মেলনের নেতৃত্বদানকারী প্রধান প্রতিনিধিবর্গের পরিচয় দাও।
প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে পৃথিবীর মোট ৩২টি দেশের প্রতিনিধি রোগ দেন।যদিও ৩২টি দেশের প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু মূল নেতৃত্বে, নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন মাত্র চারটি দেশের প্রতিনিধি। এ চার প্রধান ছিলেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ ক্লিমেনশো, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ, মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী ভিটারিও ওরলেন্ডো ।
উড্রো উইলসন
উড্রো উইলসন ছিলেন কিছুটা আদর্শবাদী, ক্লিমেনসু ছিলেন বাস্তববাদী এবং লয়েড জর্জ ছিলেন সুবিধাবাদী। উড্রো উইলসন উড্রো উইলসন ছিলেন তৎকালীন সময়ের মার্কিন রাষ্ট্রপতি। তিনি মার্কিন রাষ্ট্রবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করে এ সম্মেলনে ব্যক্তিগতভাবে যােগদান করেন। ইউরোপের রাষ্ট্রবিদদের তুলনায় ইউরোপের জনগর উইলসনের আগমনের প্রতীক্ষায় উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। উইলসন ছিলেন ঘোর আদর্শবাদী এবং ইউরোপের তদানীন্তন সমস্যা সম্পর্কে তার সুম্পষ্ট ধারণা ছিল না। তাই কূটনীতির ক্ষেত্রে তিনি ইউরোপীয় রাষ্ট্রবিদদের সমকক্ষ ছিলেন না। কিন্তু এত কিছুর পরও শান্তি স্থাপনে তার অবদান ছিল সর্বাধিক। কারণ যুদ্ধ চলাকালে সকল দেশের প্রতিনিধিরা যখন নিজ নিজ আদর্শের বাণী ছড়াতে থাকেন তখনও কোনো কাজ হয় নি। কিন্তু উড্রো উইলসন যখন চৌদ্দ দফার মাধ্যমে শান্তির প্রস্তাব দেন তখন তা কার্যকরী হয় এবং জার্মানি আত্মসমর্পণে রাজি হয়।
লয়েড জর্জ
প্যারিস শান্তি সম্মেলনে ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ। তিনি ব্রিটিশ জনগণের পূর্ণ সমর্থনপুষ্ট হয়ে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে এসেছিলেন। চারিত্রিক গুণাবলি, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও ইউরোপীয় সমস্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লয়েড জর্জকে সম্মেলনে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিল। প্যারিস সম্মলনে লয়েড জর্জ ছিলেন সর্বাধিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাষ্ট্রবিদ। প্যারিসের শান্তিচুক্তি রচনার ব্যাপারে লয়েড জর্জের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শান্তি চুক্তিগুলাে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় তিনি অসাধারণ ধৈর্যশক্তির পরিচয় দেন।
জর্জ ক্লিমেনশো
ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করেন জর্জ ক্লিমেনশো। তাকে সর্বসাধারণের বাঘ বলা হতাে। প্যারিস শান্তি সম্মেলনে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান থাকায় অনেক সময় তিনি অন্যান্য ইউরােপীয় রাষ্ট্রনীতিবিদদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হন। তবে প্যারিস সম্মেলনে তার প্রধান লক্ষ্য ছিল ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা এবং জার্মানিকে দুর্বল করে রাখা।
ভিটোরিও ওর্লন্ডো
এ সময় ইতালির প্রতিনিধিত্ব করেন ভিটোরিও ওলান্ডো। ওর্লান্ডো ছিলেন আইন বিষয়ে ভূতপূর্ব অধ্যাপক, সুপন্ডিত, সুবক্তা ও সুচতুর রাষ্ট্রবিদ । মিত্রপক্ষে যােগদানের শর্ত হিসেবে ইতালি ইতিপূর্বে যেসব গােপন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল সেগুলো কার্যে পরিণত করার ব্যাপারে তার অবদান ছিল। তবে ইংরেজি ভাষায় তার দক্ষতার অভাব, সম্মেলনের আলােচনায় প্রভাব বিস্তারের পথে তার প্রধান বাধা ছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্যারিসের শান্তি সম্মলনের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়। ১৯১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে মোট ৩২টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ গ্রহণ করলেও প্রকৃতপক্ষে এ সম্মেলনে কার্য পরিচালনা ও মূলনীতি নির্ধারণে প্রধান চার নেতা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ, ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ ক্লিমেনসো, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী ওর্লান্ডো প্যারিসের শান্তি সম্মেলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন।