প্যারিস শান্তি সম্মেলনে উড্রো উইলসনের ভূমিকা

প্যারিস শান্তি সম্মেলনে উড্রো উইলসনের ভূমিকা আলোচনা কর।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি পরাজিত জার্মানি ও তার মিত্র দেশগুলাের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের জন্য ১৯১৯ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়ােজন করে যা 'প্যারিস শান্তি সম্মেলন' নামে পরিচিত।

প্যারিস শান্তি সম্মেলনে উড্রো উইলসনের ভূমিকা :

প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে প্রধান সিদ্ধান্তগুলাে তিনটি রাষ্ট্রই গ্রহণ করে। তিনটি রাষ্ট্রের প্রধানগণ ছিলেন যথাক্রমে, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জর্জ ক্লিমেনশো, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন । উইলসনের চৌদ্দ দফার ভিত্তিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হলেও প্যারিস সম্মেলনে উইলসনের ভূমিকা ছিল অনেকটা আপসমূলক। উইলসন ইউরােপের পুনর্গঠনে যে আদর্শবাদ প্রয়ােগ করার চেষ্টা করেন তা ক্লিমেনশাে ও লয়েড জর্জের নিকট ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্র উইলসন তাদের নিকট অনেক ক্ষেত্রে আপসমূলক নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এই আপসের ফলে তিন রাষ্ট্রপ্রধান যে নীতিগলোর উপর ভিত্তি করে একমত হন তা হলাে :

(ক) জার্মানিকে সন্ধির ধারা এমনভাবে দুর্বল করে রাখা হবে, যার ফলে ভবিষ্যতে জার্মানি ইউরোপে সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ না করতে পারে।
(খ) জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ভিত্তিতে মধ্য ও পূর্ব ইউরোাপের পুনর্গঠন করা।
(গ) তুর্কি, রুশ ও হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্যকে ভেঙে ফেলা।
(ঘ) ফ্রান্সের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া।
(ঙ) ইউরোপে যাতে কোনাে শক্তি একক প্রাধান্য না পায় সেদিকে লক্ষ রাখা।

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত নীতিগুলাে ছিল প্রকৃতপক্ষে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে উড্রো উইলসন ব্রিটেন ও ফ্রান্সের স্বার্থের নিকট তার আদর্শবাদকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন।আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার নীতির কথা বললেও জার্মানিকে তার যথাযথ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রদান করা হয় নি। এক কথায় প্যারিস শান্তি সম্মেলনে উড্রো উইলসনের ভূমিকা ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের নিকট আপস ও অনেকাংশে আত্মসমর্পণ।

Next Post Previous Post