ব্যাকরণ কাকে বলে ?
ব্যাকরণ কাকে বলে ? ব্যাকরণের বিষয়বস্তু,পরিধি ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।
শিখনফল :
- ব্যাকরণের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে;
- বাংলা ব্যাকরণের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে পারবে;
- বাংলা ব্যারণের পরিধি সম্পর্কে জানতে পারবে;
- ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে।
ব্যাকরণের শাব্দিক অর্থ :
'ব্যাকরণ' শব্দটি সংস্কৃত। শব্দটির ব্যূৎপত্তি ; বি + আ + Vকৃ + অন । যার অর্থ-বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। ব্যাকরণে ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম বা শৃঙ্খলা বিশেষভাবে বিশ্লরষণ করা হয়।
ব্যাকরণ কাকে বলে
পৃথিবীতে কয়েক হাজার ভাষা রয়েছে। প্রত্যেক ভাষারই রয়েছে নিজস্ব ধ্বনি (sound), শব্দ (word), বাক্য (sentence) ও অর্থ (Meaning) ভাষার এসব ধ্বনি কিভাবে উচ্চারিত হয়,শব্দ কীভাবে গঠিত ও রুপান্তরিত হয় এবং এই শব্দ কীভাবে বিন্যন্ত হয়ে বাক্যে পরিণত হয় তা নির্দেশ করাই ব্যাকরণের কাজ। ভাষাকে অবলম্বন করেই ব্যাকরণের সৃষ্টি। ভাষা সৃষ্টি হয়েছে আগে, ব্যাকরণ এসেছে ভাষার পথ ধরে। ভাষার গতি- প্রকৃতি, তার স্বরূপ, ধরন-ধারণ ইত্যাদি বিষয় ব্যাকরণে উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা করাই ব্যাকরণের কাজ। সেজন্যই ব্যাকরণকে বলা হয় ভাষার সংবিধান।
ব্যাকরণের প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
পণ্ডিতেরা বিভিন্নভাব ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ নির্ণয় করেছেন। এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো;
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে,
যে বিদ্যার দ্বারা কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপটি আলোচিত হয় এবং সেই ভাষার পঠনে ও লিখনে এবং তাহাতে কথােপকথনে শুদ্ধরূপে তাহার প্রয়ােগ করা যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে।
মুহম্মদ এনামুল হক এর মতে,
যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া ইহার বিবিধ অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা-রচনাকালে আবশ্যক মতো সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য-প্রয়োগ সম্ভবপর হইয়া উঠে, তাহার নাম ব্যাকরণ ।
মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী এর মতে,
যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলােচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।
ড. হুমায়ূন আজাদ এর মতে,
এখন ব্যাকরণ বা গ্রামার বলতে বোঝায় এক শ্রেণির ভাষা বিশ্লেষণাত্মক পুস্তক যাতে সন্নিবিষ্ট হয় বিশেষ বিশেষ ভাষার শুদ্ধ প্রয়াগের সূত্রাবলি।
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ কাকে বলে
বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে,
যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালা ভাষা শুদ্ধরূপে লিখিতে,পড়িতে ও বলিতে পারা যায়,তাহার নাম বাঙ্গাল ব্যাকরণ ।
ড. সুকুমার সেনের মতে,
যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার স্বরপ প্রকৃতির বিচার, বিশ্লেষণ এবং যে শাস্ত্রে জ্ঞান থাকলে বাংলা ভাষা শুদ্ধরুপে বলতে ও লিখতে পারা যায় তাকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বলে।
মুনীরি চৌধুরী ও মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে,
যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয় ,তা-ই বাংলা ব্যাকরণ ।
উল্লেখিত ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞাগুলাে বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারি যে, বাংলা ব্যাকরণ হচ্ছে সেই শাস্ত্র, যাতে সন্নিবিষ্ট থাকে বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে প্রয়োগের সূত্রাবিল
বাংলা ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকা
বাংলা ভাষায় ব্যাকরণ চর্চার ইতিহাস সংস্কৃত ব্যাকরণের মতো পুরনাে নয়। ইউরোপীয় বণিক সম্প্রদায় ও মিশনারিরা খ্রিষ্টধর্ম প্রচার ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা লাভের প্রয়ােজনে বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন । তারাই বাংলা ভাষার লিখিত ব্যাকরণের পথপ্রদর্ণক। বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শন 'চর্যাপদ' রচনাকালের প্রায় এক হাজার বছর পর বাংলা ব্যাকরণ চর্চার সূত্রপাত ঘটে বিদেশিদের মাধ্যমে। সর্বপ্রথম ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুঁগিজ পাদ্রি মনোএল দা আসসুম্পসাও (Monoel da Assummpsaw) রচনা করেন দ্বিভাষিক ও খন্ডিত ব্যাকরণ। ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে এ গ্রন্থটি রােমান ভাষায় প্রকাশিত হয়। ভােকাবুলারিও এম ইদিওমা (Vocabolario em idioma Bengalla, e portuguez : dividido em duas partes) নামের এ গ্রন্থটি ছিল দুটি অংশে বিভক্ত।প্রথম অংশে ব্যাকরণের একটি সংক্ষিপ্তসার এবং দ্বিতীয়াংশে ছিল বাংলা-পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ-বাংলা শব্দাভিধান। আসসুম্পসাওর শব্দকোষ ও ব্যাকরণ প্রকাশের তিন দশক পর ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হুগলি থেকে প্রকাশিত হয় ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের (Nathaniel Brassey Halhed) ব্যাকরণ "A Grammar of the Bengal language'। হ্যালহেডের গ্রন্থটি সম্পূর্ণ ইংরেজিতে রচিত হলেও চার্লস উইলকিনসন ও পঞ্ছানন কর্মকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এই বইটিতেই প্রথম বাংলা হরফ মুদ্রিত হয় (কেবল উদাহরণগুলো)। আঠারো শতকে রচিত বাংলা ব্যারণের এ দুটি গ্রন্থ ছাড়া আর কোনাো গ্রন্থের পরিচয় পাওয়া যায়নি। উনিশ শতকের গোড়া থেকে শুরু হয় বাংলা ও ইংরেজি ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়নের অবিরাম ধারা। উইলিয়াম কেরির ইংরেজিতে লেখা "বাংলা ভাষার ব্যাকরণ" প্রকাশিত হয় ১৮০১ সালে। ১৮২০ সালে প্রকাশিত। হয় কিথের ব্যাকরণ। ১৮২৬ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে রাজা রামমোহন রায় বাংলা ভাষার ব্যাকরণ লিখেন ইংরেজি ভাষায়। তাঁর মৃত্যুর পর ১৮৩৩ সালে বাংলায় অনুদিত "গৌড়ীয় ব্যাকরণ" নামে কলকাতার স্কুল বুক সােসাইটি থেকে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।এর পর থেকে বহু বাঙালি পণ্ডিত বাংলা ব্যাকরণের নানা দিক নিয়ে গবেষণা করেন। ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়,ড. সুকুমার সেন, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, মুহাম্মদ আবদুল হাই প্রমুখ পন্ডিত বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রেখেছেন। তবে এই দুশো বছরের ব্যাকরণ চর্চায় মূলত ল্যাতিন, ইংরেজি ও সংস্কৃতের মিশ্রণ লক্ষণীয়। এ ব্যাকরণ গুলোতে বাংলা ভাষার সূত্র অন্বেষণ করা হয়েছে ইংরেজি ও সংস্কৃত ব্যাকরণের কাঠামােতে। প্রায় শতাধিক বছর আগেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দাবি তুলেছিলেন বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণের। এই নিয়ে বাংলাদেশ ও পণ্চিম বাংলার বিদগ্ধ পন্ডিতজনেরা নিরন্তর গবেষণা করেছেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির সর্বাত্মক প্রয়াস ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমির সহযোগিতায় ড. রফিকুল ইসলাম ও ড. পবিত্র সরকার সম্পাদিত 'প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ' প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ প্রণয়নের ক্ষেত্রে গ্রন্থটি এক যুগান্তকারী প্রয়াস।
বাংলা ভাষার ব্যাকরণের পরিধি
ব্যাকরণে যেসব বিষয় আলোচিত হয়, তার সার্বিক দিকগুলাই ব্যাকরণের পরিধি । ব্যাকরণের প্রধান কাজই হচ্ছে ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধি নিরূপণ ও ভাষাকে সুশৃঙ্খল রাখা। প্রত্যেক ভাষারই চারটি মৌলিক উপাদান থাকে, যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় ব্যাকরণের কাঠামাে। ভাষার প্রধান চারটি উপাদান হলাে :
ক. ধ্বনি sound);
খ. শব্দ (Word);
গ. বাক্য (Sentence) এবং
ঘ. অর্থ (Meaning)।
পৃথিবীর অন্যান্য সমৃন্ধ ভাষার মতো বাংলা ভাষাতেও এই চারটি উপাদান বিদ্যমান। আর এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়েছে বাংলা ব্যাকরণের পরিধি বা আলােচ্য বিষয়। বাংলা ব্যাকরণের প্রধান আলোচ্য বিষয় চারটি। এগুলো হলো :
ধ্বনিতত্ত্ব(Phonology),
রূপতত্ত্ব(Morphology),
বাক্যতত্ত্ব(Syntax)
অর্থতত্ত্ব (Semantics) ।
এ চারটি প্রধান আলোচ্য বিষয় ছাড়াও কোনো কোনো পণ্ডিত
অভিধানতত্ত্ব,
ছন্দ
ও অলংকারকে বাংলা
ব্যাকরণের আলােচ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভক্ত করে থাকেন। বাংলা ব্যাকরণের পরিধিভুক্ত প্রধান চারটি আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলা।
ধ্বনিতত্ত্ব
ধ্বনিতত্ত্ব বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। এখানে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত
ধ্বনি,
ধ্বনির পরিচয়,
উচ্চারণ ও উচ্চারণের স্থান,
উচ্চারণরীতি,
উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য,
ধ্বনির মিলন বা সন্ধি,
ধ্বনির পরিবর্তন,
বর্ণের পরিচয়,
বর্ণের বিন্যাস,
বানান
ইত্যাদি বিষয় আলাচিত হয় ।
রূপতত্ত্ব
বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ বা পদের নানা বিষয় আলোচিত হয় রুপতত্ত্বে।
- শব্দের ব্যুৎপত্তি,
- শব্দের গঠন
- শব্দের রিবর্তন,
- সমাস,
- প্রত্যয়,
- উপসর্গ,
- লিঙ্গ,
- বচন,
- কারক,
- বিভক্তি,
- ক্রিয়ামূল বা ধাতুরূপ,
- ক্রিয়ার কাল ও পক্ষ,
- বিপরীতার্থক শব্দ,
- সমার্থক শব্দ,
- পারিভাষিক শব্দ
ইত্যাদি বিষয়গুলো রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় ।
বাক্যতত্ত্ব
ধ্বনি থেকে শব্দ, শব্দ থেকে বাক্য। বাক্য হলাে মনের ভাব প্রকাশক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টির ধারাবাহিক বিন্যাস। বাক্যতত্ত্বে সেই বাক্যের গঠন, শ্রেণিবিভাগ, পরিবর্তন, পদক্রম আলোচিত হয়। এ ছাড়াও উক্তি, বাচ্য, বাগ্ধারা, বাক্য সংকোচন, বিরাম বা যতিচিহ্ন ইত্যাদি বিষয় এ অংশে আলোচিত হয়ে থাকে।
অর্থতত্ত্ব/বাগর্থতত্ত্ব
শব্দ ও বাক্যের অর্থ বিষয়ক নানা দিক আলোচিত হয়ে থাকে অর্থতত্ত্বে । শব্দ ও বাক্যের অর্থ বিচার, অর্থের প্রকারভেদ (মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, ব্যঞ্জনার্থ) ইত্যাদি বিষয়গুলো অর্থতত্ত্বে অন্তর্ভুক্ত।
ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা
যেকোনাে ভাষার শৃদ্ধাশুদ্ধি নিরুপণের জন্য ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনেকে মনে করেন ব্যাকরণ না জেনেও ভাষা শুদ্ধভাবে আয়ত্ত করা যায়। এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, ব্যাকরণ না জেনে ভাষাকে শুদ্ধরূপে প্রয়োগ করতে হলে একটি আদর্শ ভাষা-পরিবেশ দরকার। কিন্তু বাস্তবে সেরকম একটা আদর্শ ভাষা-পরিবেশ পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। অঞ্চলভেদে একই ভাষার রয়েছে নানা রকম ভিন্নতা। তা ছাড়া সমাজে অহরহ ভাষার ভুল প্রয়োগ বা অপপ্রয়োগ হচ্ছে। শিশুরা বেডে উঠছে এই ত্রটিপূর্ণ ভাষিক পরিবেশে। সুধীজন ও গণমাধ্যমে অনুসৃত কথ্য বাচনভঙ্গির নানা বৈচিত্র্যের একটি সমন্বিত রূপই প্রমিত বাংলা । একজন বাঙালি হিসবে আমাদের প্রমিত বাংলা শেখার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। এই প্রমিত বাংলা বেশিরভাগ বাঙালির জন্মগত বা মায়ের ভাষা নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে, গণমাধ্যমে এবং প্রয়ােগশিল্পে প্রমিত বাংলার মৌখিক ব্যবহার ব্যাপক লক্ষণীয়। কিন্তু সমাজজীবনের নানা ক্ষেত্র আমরা উচ্চারণ, শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন ছাড়াও নানাবিধ ভাষাগত শিষ্টাচার লঙ্গনের মাধ্যম ভাষার অপপ্রয়ােগ বা ভুল প্রয়োগ ঘটাই। ভাষার প্রতি মমত্বববোধের পাশাপাশি ব্যাকরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে এই অপপ্রয়োগ বা ভুল প্রয়ােগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। টি ভাষার স্বরুপ ও প্রকৃতি জানার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ভাষার আঙ্গিক,গঠনশৈলী, বিভিন্ন রীতিনীতি জানতে হলে ব্যাকরণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। উচ্চারণ ও বানান হলো ভাষার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক। ভাষা লেখার জন্য যেমন বর্ণর প্রয়োজন, তেমনি উচ্চারণের জন্য প্রয়ােজন ধ্বনির। এই র্ণ ও ধ্বনিগুলোর সঠিক স্থাপন, উচ্চারণের নিয়ম ব্যাকরণের সহায়তা ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ভাষার প্রমিত বানানরীতি জানতে হলে ব্যাকরণ পাঠ আবশ্যক শব্দ গঠন, ব্যবহারবিধি ও শব্দের সঠিক অর্থ নিরুপণের জন্য ব্যাকরণের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমরা জানি প্রত্যয়, উপসর্গ, সন্ধি, সমাস হলা শব্দ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ব্যাকরণিক জ্ঞান ছাড়া এইসব মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠন করা একেবারেই অসম্ভব। তা ছাড়া শব্দের সঠিক ব্যবহার, ব্যুৎপত্তি ও অর্থ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যাকরণিক জ্ঞান প্রয়োজন। কেবল শব্দই নয়; বাক্য গঠন ও বাক্যের অর্থ প্রকাশের ক্ষেত্রেও ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব রয়েছে। সঠিক, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাকরণিক জ্ঞান দরকার। একটি বাক্যে সাধারণত তিন ধরনের অর্থ নিহিত থাকে : সাধারণ অর্থ, ব্যঞ্জনার্থ ও লক্ষণার্থ। এসব অর্থ সৃষ্টি, অনুধাবন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাকরণের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা একটি ভাষার সমৃদ্ধ উপাদান হচ্ছে সাহিত্য। সাহিত্যের রয়েছে নানা শাখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ইত্যাদি অনেক রকম সৃষ্টি। এইসব সাহিত্যকর্মের নিয়ম-নীতি, রচনা কৌশল, ছন্দ-অলংকার প্রয়ােগ এবং নানারকম বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্র ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।মােটকথা, ভাষাকে শুদ্ধরূপে বলতে, লিখতে ও অনুধাবন করতে হলে ব্যাকরণ পাঠ অপরিহার্য।