ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠন ও কার্যাবলী

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর।

ভারতবর্ষের ধনৈশ্বর্যে আকৃষ্ট হয়ে যেসব বিদেশি কোম্পানি বাণিজ্য উপলক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করে সেগুলোর মধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল উল্লেখযোগ্য । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল মূলত একটি বণিক সংঘ। ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনই ছিল এর মুখ্য উদ্দেশ্য । আর এই উদ্দেশ্য সাধন প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে ইংরেজগন ভারতবর্ষে বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে আগমন করে বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।


ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠন

১৫৯১ সালে রেলফ ফিচ ভারতবর্ষ এবং ব্রহ্মদেশ ভ্রমণ করেন । তার উৎসাহ এবং পর্তুগীজদের সাফল্য ইংরেজদের ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে বিশেষভাবে আগ্রহী করে তোলে । তাই প্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ইংরেজরা একটি বাণিজ্যিক সংঘ গঠন করে। জন 'মিলড্রেন হল' ১৫৯৯ সালে ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথের নিকট থেকে একটি অনুরোধ পত্র নিয়ে সম্রাট আকবরের দরবারে আগমন করেন । এই অনুরোধ পত্রে ইংরেজ বণিকদেরকে পর্তুগিজ বণিকদের ন্যায় বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদানের আবেদন জানানো হয় । রানী এলিজাবেথের প্রভাবের ফলে এ বাণিজ্যিক সংঘ পরবর্তী বছর প্রাচ্যের সকল দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয় । এ বাণিজ্যে সংঘ 'ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' নামে পরিচিত।


ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকাণ্ড :

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত কর্মপন্থা অবলম্বন করে :

  • সুরাটে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ :
    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে কয়েকবছর ভারতবর্ষের সাথে বাণিজ্য স্থাপনের চেষ্টা না করে সুমাত্রা, জাভা, মালাক্কা ইত্যাদি স্থানে মসলার ব্যবসা আরম্ভ করে। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের সুপারিশ পত্র নিয়ে বাণিজ্য কুঠি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ক্যাপ্টেন হকিন্স সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে আগমন করেন । সম্রাট জাহাঙ্গীর ক্যাপ্টেন হকিন্সের আবেদনক্রমে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণের অনুমতি দেন ।

  • হুগলিতে কুঠি স্থাপন :

    ১৬৩১-৩২ সালেই বাংলায় যথার্থভাবে ইংরেজ কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্রপাত হয় । ১৬৫০ সালে ইংরেজরা নবাবের নিকট থেকে বাংলায় বাণিজ্য করার সনদ পায় এবং পরবর্তী বছরে হুগলিতে কুঠি স্থাপন করে ।

  • রাজমহল ও মালদহে কুঠি স্থাপন :

    ১৬৬৮ সালে ঢাকা এবং তার কিছুদিন পর রাজমহল ও মালদহে কুঠি স্থাপিত হয় । এসব এলাকায় শাহজাদা সুজা ইংরেজদেরকে বার্ষিক 3000 টাকার বিনিময় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান করেন ।

  • ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপন :

    ১৬৮৯ সালে কোম্পানি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপন করে। এর নাম ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজা উইলিয়ামের নামে রাখা হয়।

  • জমিদারি লাভ :

    ১৬৯৮ সালে কোম্পানি কলকাতা, সুতানটি ,গোবিন্দপুরের জমিদারি লাভ করে । বিনিময়ে সরকার 12000 টাকা রাজস্ব আদায় করে ।

পরিশেষে বলা যায় যে , সামান্য বাণিজ্য সংস্থা থেকে একটি রাজনৈতিক সংস্থায় উত্তরণ ছিল কোম্পানির পক্ষে আকস্মিক, কিন্তু তা ছিল বাস্তবতার এক নির্মম পরিহাস । বাণিজ্যিক অধিকার ও কুঠি স্থাপন, এদেশীয় রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করে কোম্পানি বাংলা তথা ভারতবর্ষে একটি অজেয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।

Next Post Previous Post