ফকির ও সন্ন্যাসীদের পরিচয় দাও।
বাংলায় ফকির ও সন্ন্যাসীদের পরিচয় দাও। অথবা, ফকির-সন্ন্যাসী কদের বলা হতো?
উত্তর : ভূমিকা : পলাশির যুদ্ধেরপর হতে আঠারো শতকের শেষ অবধি বাংলার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োজিত বাংলার ফকির-সন্ন্যাসী তথা নিরীহ সাধক সম্প্রদায় শাহ মজনুর নেতৃতে তাদের পার্থিব আকাঙ্ক্ষা মেটানোর আভিপ্রায়ে বাংলায় নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু করে তা বাংলার হতিহাসে ফকির-সন্ন্যাসী অন্দোলন নামে অভিহিত।
সকির-সন্ন্যাসীদের পরিচয় :
ফকিররা সুফি সম্প্রদায়ভূক্ত সাধক ছিল। তারা সুফি মতবাদের সাথে হিন্দু যোগীদের ভাবধারা গ্রহণ করে। বাংলায় দু'ধরনের ফকিরের পরিচয় পাওয়া যায়, যথা- মাদারি ফকির ও কলন্দর ফকির।
মাদারি ফকিররা লম্বা চুল রাখত, শরীরে ভস্ম মাখত, হাতে ও গলায় লােহার শিকল পরত এবং কালাে পাগড়ি ও কালাে পতাকা ধারণ করতাে। তাছাড়া তারা সর্বদা আগুন জ্বালিয়ে রাখত ও প্রচুর ভাং খেত।
আর কলন্দর ফকিররা বোরহানা নামে কথিত এক টুকরা কাপড় পরিধান করতো। এজন্য তারা বুরহানা ফকির নামেও পরিচিত ছিল। তারা যোগিদের ন্যায় লম্বা চুল রাখত ও পায়ে লোহার বলয় পরত।
অন্যদিকে সন্ন্যাসীরাও ছিল এক ধরনের সাধক । এরাও দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। একশ্রেণীর সন্ন্যাসীরা তীর্থে ঘুরে বেড়াত এবং অন্য শ্রেণীর সন্ন্যাসীরা মঠে বাস করতাে। মঠ সন্ন্যাসীরা সব কিছু ত্যাগ করে সাধনায় ব্রত থাকত। কিন্তু তাদের অনেকে লোভের বশবর্তী হয়ে ব্যবসায় ও সুদের কারবারে লিপ্ত হয়ে অর্থোপার্জন করতে থাক। তারা সােনার কানবালা, হীরাখচিত শিকল এবং সোনা ও রুপার বালা পরত। তাদের মঠ প্রাচীরবেষ্টিত ও সুরক্ষিত থাকত। সন্ন্যাসীরা অনেক সময় গুপ্তচরের কাজ করতাে ও গােপন সংবাদ সরবরাহ করতাে। বার্ষিক স্নান উৎসবের সময় বিভিন্ন গ্রাম হতে সন্ন্যাসীরা এসে মহাস্থান, চিলমারী, সিংজানী ও লাঙ্গলবন্দে সমবেত হতো। বস্তুত এসকল ফকির ও সন্ন্যাসী কালক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং বাংলার বিভিন্ন স্থানে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ফকির-সন্ন্যাসীরা বাংলায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিল। ডাকাতি ও দস্যূবৃত্তির ফলে যদিও তারা জনসমর্থন হারায় তথাপি ইংরেজদের অত্যাচার আর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এই সাধক শ্রেণীর প্রতিবাদী ও প্রতিরোধ আন্দোলন বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে সর্বাত্নক আন্দোলনের প্রেরণা যুগিয়েছে।