চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কেন প্রবর্তন করা হয়েছিল?
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কেন প্রবর্তন করা হয়েছিল ?
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক কার্যক্রমের পর ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে।পাঁচসালা বন্দোবস্তের অকার্যকারিতা, ভূমি উন্নয়ন ও রাজস্ব পরিমাণ নিরধারণ, কোম্পানির প্রতি অনুগত নতুন জমিদার শ্রেণী সৃষ্টি, কৃষকদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার প্রয়ােজনীয়তা,কোম্পানির অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ প্রভৃতির প্রেক্ষাপটে কোম্পানি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কারণ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
১. পাঁচসালা বন্দোবস্তের অকার্যকারিতা
ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামলে প্রবর্তিত পাঁচসালা বন্দোবস্ত ফলপ্রসূ হয় নি। পাঁচসালা বন্দোবস্তের কুফল প্রতিরোধের জন্য হেস্টিংস যে বাৎসরিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন সেটাও গভর্নমেন্ট, জমিদার এবং প্রজাদের কোনোই মঙ্গল সাধন করে নি। এ দুরবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কর্নওয়ালিস ভূমি রাজস্ব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।
২. ভূমির উন্নয়ন ও রাজস্বের পরিমাণ নির্বারণ
কর্নওয়ালিস মনে করেন যে, জমিদারগণ জমির মালিক হলে তারা জমির উন্নয়ন ও প্রজার মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করবেন এবং কোম্পানির রাজস্ব নিয়মিত আদায় হবে। জমিদারদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। ফলে অত্যাচারী ও বিলাসী জমিদারগণ সাধারণ মানুষের উপর উৎপীড়ন করতেও দ্বিধাবােধ করতো না। তাই প্রজাদের এ উৎপীড়ন হতে মুক্তিদানের জন্যই এ প্রথা প্রবর্তন করা হয়।
৪. জমির উপর জমিদারের স্থায়ী মালিকানা নিশ্চিতকরণ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পূর্বে জমির মালিকানা জমিদার বা কৃষকদের হাত স্থায়ী ছিল না। ফলে তারা কেউ কৃষির উন্নতির ব্যাপারে আগ্রহ দেখাত না। তাই জমির উপর তাদের স্থায়িত্ব বহাল রাখার জন্য এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
৫. অর্থনৈতিক ক্ষতি হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা
অনেক ক্ষেত্রে জমিদারগণ কোম্পানিকে প্রতিশ্রুত রাজস্ব প্রদান করতে ব্যর্থ হয়ে আত্মগােপন করতাে। এতে সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতাে। এ ব্যবস্থা হতে মুক্তির জন্য কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।
৬. জমিদারদের আনুগত্য লাভ
এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের আরও একটি কারণ হলো জমিদারগণ বহুবিধ সুবিধা পাবে এবং বিনিময়ে তারা বেনিয়া ইংরেজদের অনুগত থাকবে। ফলে এদেশ থেকে তাদের স্বার্থ আদায় অনেক সহজ হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, আর্থিক প্রয়ােজনের তাগিদে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাকে একটি নিশ্চিত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্যতম উদ্দেশ্য হলেও এ বন্দোবস্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছিল একথা স্বতঃসিদ্ধ। কাজেই আর্থিক দিক থেকে এ বন্দোবস্ত ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক হাতিয়া হিসেবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সাফল্য অস্বীকার করা যায় না।