হাজি শরিয়তুল্লাহ কে ছিলেন

ফরায়েজি আন্দোলনের জনক হাজী শরীয়তুল্লাহ পরিচয় দাও।


বাংলার মুসলমানদের মধ্যে হাজি শরিয়তুল্লাহ ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পলাশির যুদ্ধের পর পরাধীনতার যুগে বাংলার মুসলমানদের চরম অবনতির কথা উপলব্ধি করেছিলেন। হাজি শরিয়তুল্লাহ ছিলেন ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবর্তক। ফরায়েজি আন্দোলন ছিল বাংলাভিত্তিক একটা সংস্কার আন্দালন।



হাজি শরিয়তুল্লাহর পরিচয়


হাজি শরিয়তুল্লাহ মাদারীপুর জেলার শামাইল (বাহাদুরপুর) গ্রামে ১৭৮১ সালে সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আট বছর বয়সে পিতা আব্দুল জলিল তালুকদার প্রাণত্যাগ করলে শরিয়তুল্লাহ পিতৃব্য আজিমুদ্দীনের গৃহে আশ্রয় নেন। বার বছর বয়সে পিতৃব্য গৃহ থেকে পলায়ন করে কলকাতায় গমন করেন। সেখানে মওলানা বাশারত আলীর নিকট কুরআন পাঠ শিক্ষা গ্রহণ করেন।

তিনি ১৭৯৯ সালে আঠারাে বছর বয়সে তার ওস্তাদের সাথে মক্কায় গমন করেন। সেখানে মওলানা মুরাদের কাছে দুই বছর ও বিখ্যাত পন্ডিত তাহির কাছে চৌদ্দ বছর আরবি ভাষা ও ইসলামিক শাস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করেন। অতঃপর কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর ইসলামিক বিদ্যা অধ্যয়ন করেন।

ওহাবি মতবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে শরিয়তুল্লাহ ১৮১৮ সালে আরবদেশ হতে বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি এক সৃষ্টিকর্তা ও এক রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, রমজান মাসে রােজা রাখা, সক্ষম ব্যক্তির হজব্রত পালন এবং যাকাত দান ইত্যাদি ইসলামিক ফরজ' আদায়ের জন্য মুসলমান সমাজে প্রচার চালান।

'ফরজ' কথা থেকে তার আন্দোলন 'ফরায়েজি আন্দোলন' নামে আখ্যায়িত। কালী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, পীর পূজা, কবর পূজা, নৃত্যগীত ইত্যাদি শেরেকি কর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি মুসলমানদের উপদেশ দেন। এছাড়া হিন্দু জমিদারদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, পৈতানুষ্ঠান, রথযাত্রা ও দুর্গা পূজায় কর প্রদান না করার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দেন।

শরিয়তুল্লাহর এ সংস্কার আন্দোলন কালক্রমে ইংরেজ শাসনবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। ভারতবর্ষ ইংরেজ শাসকদের দ্বারা কবলিত হওয়ায় শরিয়তুল্লাহ একে 'দারুল-হরব' বলে ঘোষণা করেন।

হাজি শরিয়তুল্লাহর ফরায়েজি আন্দোন পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।


পরিশেষে বলা যায় যে, হাজি শরিয়তুল্লাহ ছিলেন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার একজন দিশারি কৃষক, তাঁতি তথা শ্রমজীবী মানুষকে যুগ-যুগের শোষণ-বঞ্চনা থেকে এবং বিদেশি শাসন-শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্যই শরিয়তুল্লাহ তার আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন।

Next Post Previous Post