পাঁচসালা বন্দোবস্তের নীতিমালা
পাঁচসালা বন্দোবস্তের নীতিমালা কি ছিল?
কোম্পানির গভর্নর ওয়ারেন হোস্টিংস ১৭৭২ সালে পাঁচসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। এ বন্দোবস্ত অনুযায়ী প্রতি জেলায় জমি নিলামে পাঁচ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এ বন্দোরবস্তের মেয়াদ ইজারাদারদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা উল্লেখ করা হয়।
পাঁচসালা বন্দোবস্তের নীতিমালা :
পাঁচসালা বন্দোবস্তের নীতিমালার সারসংক্ষেপ নিম্নে উপস্থাপন করা হলা :
১. মেয়াদ : বলা হয় যে, বন্দাবস্তের মেয়াদ হবে ১৯ এপ্রিল ১৭৭২ থেকে ১০ এপ্রিল ১৭৭৭ সাল পর্যন্ত, যা পাঁচ বছর স্থায়ী হবে।
২. জমি ও জমা নির্ধারণ : ইজারা জমি গঠিত হবে পুরো পরগনা নিয়ে এবং এর সরকারি জমা হবে সর্বোচ্চ একলক্ষ টাকা।
৩. কবুলিয়ত ও পাট্রা : কোম্পানি ইজারাদারদের সঙ্গে শর্তাদি সংবলিত চুক্তি বা কবুলিয়ত স্বাক্ষর করবে। ইজারাদারগণও অনুরূপভাবে শর্তাদি উল্লেখ করে রায়তকে পাট্রা দিবে। পাট্রায় দখলিকৃত জমির পরিমাণ ও খাজনার হার উল্লেখ থাকবে।
৪. আবওয়াব অবৈধ : পাঁচসালা বন্দোবস্তের নীতিমালায় বলা হয় যে, পাট্টায় অনুল্লিখিত সমস্ত আবওয়াব বা বিবিধ কর আদায় অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য, বিয়ে-শাদি, পূজা-পার্বণ, জমিদারের চিকিৎসা, তীর্থস্থান ভ্রমণ প্রভৃতির নাম করে আবওয়াব আদায় করা হতো। আলীবর্দী খানের পর থেকে আবওয়াব একটি অত্যাচারে পরিণত হয়।
৫. নজর-সেলামি নিষিদ্ধ : পাঁচসালা বন্দোবস্তর নীতিমালায় বলা হয় যে, নজর ও সেলামি বাবদ কোনাে অর্থ আদায় করা যাবে না।
৬. নিলাম ডাক : বলা হয় যে, জেলা কালেক্টর উক্ত সব নীতিমালা সর্বত্র ঘোষণা করবেন এবং ইজারা গ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের থেকে নিলাম ডাক আহ্বান করবেন।
৭. Statement of Vatuation : কালেক্টর একটি পরগনাওয়ারি হস্তবুদ বা Statement of Vatuation তৈরি করবেন। ঐ হস্তবুদের নিরিখে কমিটি নিলাম পরিচালনা করবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, রাজস্ব আদায় সুনিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সংবলিত পাঁচসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয়। এ নীতিমালা ছিল মূলত কোম্পানি ও ইজারাদারদের পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্যের দলিল।