পাঁচসালা বা পঞ্চসনা বন্দোবস্ত কি

পাঁচসালা বা পঞ্চসনা বন্দোবস্ত বলতে কি বুঝ?

১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করলেও প্রকৃত ব্যবস্থাপনা ছিল মােহাম্মদ রেজা খান ও সিতাব রায় নামে দু'জন দেশি কর্মচারীর হাতে। কোম্পানির পক্ষে একজন প্রতিনিধি মুর্শিদাবাদে অবস্থান করে এদের কাছ থেকে হিসাব বুঝে নিতেন এবং নবাবের সঙ্গে কোম্পানির যোগাযােগ রক্ষা করতেন। ইতিমধ্যে কোম্পানি বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে শুধুমাত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করে কিন্তু রাজস্ব শাসনের কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করে নি। দায়িত্ববিহীন ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে দেশের অর্থনীাতি প্রায় ধংসপ্রাপ্ত হয়। এমতাবস্থায় ১৭৭১ সালের ২৮ আগস্ট কোর্ট রেজা খান ও সিতাব রায়কে অপসারণ করে সরাসরি কোম্পানিকে দেওয়ানি শাসন পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু দায়িত্ব অর্পণ করলেও পরিচালনা সম্পর্কিত কোনো নীতিমালা কােম্পানিকে দেওয়া হয় নি। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার এক পর্যায়ে প্রবর্তিত হয় পাঁচসালা বা পঞ্চসনা বন্দোবস্ত পঞ্চসনা বা পাঁচসালা বন্দোবস্ত (১৭৭২-১৭৭৭) ১৭৭১ সালের ২৮ আগস্ট কোর্ট অব ভাইরেক্টর্স লিখিত পত্রে কোম্পানিকে দেওয়ানি শাসন সরাসরি গ্রহণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু দেওয়ানি শাসন পরিচালনার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করে নি। ফলে গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস নিজেই রাজস্ব সংগ্রহের ব্যাপারে একটি পরিচালনা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। প্রচলিত বার্ষিক রাজস্ব নীতি বর্জন কর হেস্টিংস প্রস্থাব করেন পাঁচ বছর মেয়াদে ইজারাদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করার জন্য। এটি পঞ্চসনা বা পাঁচসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।>হেস্টিংস পঞ্চসনা বা পাঁচসালা বন্দোবস্তের নীতি ঘোষণা করেন ১৭৭২ সালের ১৪ মে। গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস ও তার কাউন্সিলের চারজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় 'কমিটি অব সার্কিট (১৭৭২)। এ কমিটির দায়িত্ব ছিল পঞ্চসনা বা পাঁচসালা ভূমি বন্দোবস্ত সম্পন্ন করা।

পরিশেষে বলা যায়, রাজস্ব শাসন পরিচালনার জন্য কোম্পানির প্রয়োজন ছিল রাজস্ব বিষয়ে জানা ও অভিজ্ঞতা অর্জন। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তারা ভূমি ব্যবস্থায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্যতম ছিল পঞ্চসনা বা পাঁচসালা বন্দোবস্ত।

Next Post Previous Post