কাশফ সম্পর্কে আলোচনা কর
কাশফ কাকে বলে ? কাশফ বলতে কি বুঝায় বিস্তারিত আলোচনা কর।
কাশফের শাব্দিক অর্থ :
কাশফ শব্দের অর্থ উন্মুক্তকরণ, উন্মোচন, উদঘাটন, আবিস্কার, অনুষন্ধান, পরীক্ষা, আন্দোলন, আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা
প্রকাশ্যে ওহী ছাড়া অদৃশ্য থেকে প্রাপ্তির সকল প্রকারের নাম কাশফ ও ইলহাম রাখা হয়েছে।যখন খাতিমুল আম্ভিয়া মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত ওহী নিঃশেষ হয়ে গেল তখন অদৃশ্য থেকে প্রাপ্তির কেবল একটি আকার কাশফ ও ইলহাম এখন বাকি রয়ে গেছে।
কাশফ সম্পর্কে কুরআনের বাণী :
কাশফ সম্পর্কে আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে :
"অতঃপর তারা সাক্ষাত পেল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের যাকে আমি আমার নিকট থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার নিকট থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।"
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ তা অলা বলেন :
"স্মরণ করুন, যখন ফেরেশতারা বলল : হে মরিয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং পবিত্র করেছেন। তিনি আপনাকে সারা বিশ্বের নারীদের মোকাবিলায় মনোনীত করেছেন।"(সূরা ইমরান)
উপরিউক্ত কুরআনের আয়াত সমূহ দ্বারা কাশফ ও ইলহামের জ্ঞান প্রমানিত হয়ে গেল।
জ্ঞান অকাট্য হয় না ধারণা মূলক? সুতরাং এই জ্ঞান যে অস্বীকার করবে সে কুরআনের আয়াত অস্বীকারকারী হবে।
এখানে প্রশ্ন হয় যে, কাশফের মাধ্যমেও কারো মনের কথা জেনে নয়া ইলমুল গায়েব নয় কি? যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার বৈশিষ্ট্য।
জওয়াব হলো এই যে, একে কাশফে ক্বলব বলা হয় এবং এটা ইলমে গায়েব নয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম আল-জাওযী (রহ) বলেন
"এটা ইলমুল গায়ব নয়; বরং আলেমুল গায়েব। আল্লাহ তাআলা ক্বলবে নিক্ষেপ করেছেন, যা নূরের সুসংবাদপ্রাপ্ত এবং বাতিল চিত্র, ভ্রষ্ট কল্পনা ও কুমন্ত্রণায় মশগুল নয়। এগুলো বস্তু নিশ্চয়ের স্বরূপ উদ্ঘাটনে বাধা হয়ে থাকে।"
আর এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) থেকেও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ বর্ণনা থেকে জানা গেল যে, এটা ইলমুল গায়ব নয়। কাশফ আল্লাহ তায়ালার বিশেষ বান্দাদের হয়ে থাকে, যাদের অন্তর স্বচ্ছ ও খোদায়ী মহব্বতে নিমজ্জিত থাকে। আরো জানা গেল যে, যোগী ও বেদ্বীনদের উপর বস্তু নির্ণয়ের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয় না।
ইমাম আল গাজ্জালী (রহ) বলেন, কাশফের দরজা তার জন্য খোলা হয়, যে তাকওয়া সহকারে আল্লাহর যিকিরে নিষ্ঠাবান হয়; অতএব তাকওয়া হচ্ছে যিকিরের দরজা ও যিকির কাশফের দরজা।
ইমাম আল গাজ্জালী (রহ) আরো বলেন, সুলূকের শুরুই মুশাহাদা কাশফ আরম্ভ হয়ে যাওয়া।এমনকি সালিকগণ জাগ্রত অবস্থায় নবীগণের রূহ ও ফেরেশতাগণ কে প্রত্যক্ষ করেন , তাদের কথা শুনেন এবং তাদের কাছ থেকে উপকার লাভ করে থাকেন।
গাউসুল আজম শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ) বলেন , মে ব্যক্তি ঈমান শক্তিশালী হয়ে যায় এবং বিশ্বাস অটল হয়ে যায় , সে কিয়ামতের সেই সব বিষয়ে অন্তরের চোখে প্রত্যক্ষ করে, আল্লাহ তায়ালা যেগুলো সম্পর্কে খবর দিয়েছেন। সে দেখে জান্নাত ও দোজখকে । সে দেখে শিঙ্গা ও তাতে নিয়োজিত ফেরেশতা কে , সে সবকিছু কে সত্যিকার ও বাস্তব অবস্থায় দেখতে পায়।
শাইখুল ইসলাম ইমাম তাহমিয়াহ (রহ) বলেন, নূর , ইলহাম, কাশফ, কারামত ইত্যাদি হচ্ছে জিকিরের প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল। এগুলো আপনা আপনি প্রকাশ পেলে নিঃসন্দেহে সাহায্যকারি ও মদদগার
এরিস্টটল আত্মাকে যে চারটি বৃত্তিকে ভাগ করেছিলেন সুফিরা তা গ্রহণ করেন। তারা নব্যপ্লেটোবাদদের সাথে একমত হয়ে বলেন যে, মায়ের গর্ভেই আত্মার উদ্ভিদ বৃত্তির সৃষ্টি হয়। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কিছু বাসনা প্রদর্শন করে এবং পরবর্তী পর্যায়ে অর্জিত হয় কালব বা মন। এ পর্যায়ে প্রত্যক্ষ ও বােধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরপর আত্মা প্রয়োগ করে তার দৃষ্টি শক্তি এবং সরাসরি প্রত্যক্ষ করে আল্লাহর আলােক। জড় জগতের অন্তর্নিহিত বাস্তবসত্তাকে প্রত্যক্ষ করাই আত্মার মৌলিক কাজ সুফিদের মতে, আত্মার উৎপত্তি ঘটেছে এক স্বর্গীয় আদিনিবাস থেকে। ভাগ্যচক্রে তা সেখান থেকে অধঃপতিত হয়েছে। তাই আদি পবিত্রতা পুনরুদ্ধার করতে হলে কিছু পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। তাদের এ মতের সাথে জন্মান্তরবাদের কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। আসলে কোন সুফিই পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না। মুক্তি লাভের পূর্ব পর্যন্ত আত্মার দৈহিক আকার তার কর্ম দ্বারা নির্ধারিত হয়। সুফিরা এ ধারণাটির তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন। তাদের মতে, দেহ ধ্বংস হবার পরও আত্মা টিকে থাকবে এবং জগতে কর্ম অনুসারে সে তার ফল ভােগ করবে। ভালাে কাজ করলে সে পুরস্কৃত হবে এবং খারাপ কাজ করলে সে শাস্তি পাবে। জড় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আত্মা একটি মসৃণ দেহ লাভ রবে এবং অনন্ত আত্মায় মিশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুখ বা দুঃখ ভােগ করবে। এভাবে আত্মার পার্থিব জীবনের কর্মফল ভােগ করাকে বারজখ বলা হয়। তাই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সর্বোত্তমরূপে সৃষ্টি করেছি । কিন্তু মানুষ নিজেই তার পাপকর্ম দারা নিজেকে অধঃপতিত করেছে এবং এজন্যই শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত বারযাখ অবস্থায় তাকে তার কর্মফল ভােগ করতে হবে।"
পরিশেষে বলা যায় যে, আত্মা একটি মসৃণ পরমাণু কিংবা কিছু সংখ্যক ইলেকট্রনের যােগফল কিংবা কিছু রাসায়নিক উপকরণের সমন্বয় কিছুই বলা যায় না। আসলে আত্মা উপর থেকে আগত একটি শক্তি বিশেষ। আল্লাহর জ্ঞানে আত্মার কিছু আকার বিদ্যমান আছে এবং এ ধরনের একটি আকারের সাথে একটি গুণের সংযােগই আত্মা। এসব আকারের উপর আল্লাহ তাঁর গুণাবলি প্রদান করেন। আল্লাহ যখন তার গুণাবলির সাথে আকারসমূহকে যুক্ত করেন তখনই সৃষ্টি হয় বস্তু । সুতরাং সুফিবাদের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।